কলি নিষধরাজ্যে এসে নলের ছিদ্র অনুসন্ধান করতে লাগলেন। বার বৎসর পরে একদিন কলি দেখলেন, নল মূত্রত্যাগের পর পা না ধুয়ে শুধু আচমন করে সন্ধ্যা করছেন। সেই অবসরে কলি নলের দেহে প্রবেশ করলেন। তার পর তিনি নলের ভ্রাতা পুষ্করের কাছে গিয়ে বললেন, তুমি নলের সঙ্গে অক্ষক্রীড়া কর, আমার সাহায্যে নিষধরাজ্য জয় করতে পারবে। পুষ্কর সম্মত হয়ে নলের কাছে চললেন, কলি বৃষের রূপ ধারণ ক’রে পিছনে পিছনে গেলেন।
নল পুষ্করের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করতে পারলেন না, দ্যূতক্রীড়ায় প্রবৃত্ত হলেন এবং ক্রমে ক্রমে সুবর্ণ যানবাহন বসন প্রভৃতি বহু প্রকার ধন হারলেন। রাজাকে অক্ষক্রীড়ায় মত্ত দেখে মন্ত্রী, পুরবাসিগণ ও দময়ন্তী তাঁকে নিবৃত্ত করবার চেষ্টা করলেন, কিন্তু কলির আবেশে নল কোনও কথাই বললেন না। দময়ন্তী পুনর্বার নিজে গিয়ে এবং তাঁর ধাত্রী বৃহৎসেনাকে পাঠিয়ে রাজাকে প্রবুদ্ধ করবার চেষ্টা করলেন, কিন্তু কোনও ফল হ’ল না। তখন দময়ন্তী সারথি বার্ষ্ণেয়কে ডেকে আনিয়ে বললেন, রাজা বিপদে পড়েছেন, তুমি তাঁকে সাহায্য কর। তিনি পুষ্করের কাছে যত হেরে যাচ্ছেন ততই তাঁর খেলার আগ্রহ বাড়ছে। রাজা মোহগ্রস্ত হয়েছেন তাই সুহৃজ্জনের আর আমার কথা শুনছেন না। আমার মন ব্যাকুল হয়েছে, হয়তো তাঁর রাজ্যনাশ হবে। তুমি রথে দ্রুতগামী অশ্ব যোজনা কর, আমার পুত্রকন্যাকে কুণ্ডিন নগরে তাদের মাতামহের কাছে নিয়ে যাও। সেখানে আমার দুই সন্তান, রথ ও অশ্ব রেখে তুমি সেখানেই থেকো অথবা যেখানে ইচ্ছা হয় যেয়ো। সারথি বার্ষ্ণেয় মন্ত্রীদের অনুমতি নিয়ে বিদর্ভ রাজধানীতে গেল এবং বালক-বালিকা, রথ ও অশ্ব সেখানে রেখে ভীম রাজার কাছে বিদায় নিলে। তার পর শোকার্ত হয়ে নানা স্থানে ভ্রমণ করতে করতে অযোধ্যায় গেল এবং সেখানে রাজা ঋতুপর্ণের সারথির কর্মে নিযুক্ত হ’ল।
১৫। নল-দময়ন্তীর বিচ্ছেদ ― দময়ন্তীর পর্যটন
নলের রাজ্য ও সমস্ত ধন অক্ষক্রীড়ায় জিতে নিয়ে পুষ্কর হেসে বললেন, আপনার সর্বস্ব আমি জয় করেছি, কেবল দময়ন্তী অবশিষ্ট আছেন, যদি ভাল মনে করেন তবে এখন তাঁকেই পণ রাখুন। পুণ্যশ্লোক নলের মন দুঃখে বিদীর্ণ হ’ল, তিনি কিছু না বলে তাঁর সকল অলংকার খুলে ফেললেন এবং বিপুল ঐশ্বর্য ত্যাগ ক’রে একবস্ত্রে অনাবৃতদেহে রাজ্য থেকে নিষ্ক্রান্ত হলেন। দময়ন্তীও একবস্ত্রে তাঁর সঙ্গে গেলেন।