পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/২০১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৭৪
মহাভারত

খুঁজতে লাগলেন। সুদেব নামে এক ব্রাহ্মণ চেদি দেশে এসে রাজভবনে যজ্ঞকালে দময়ন্তীকে দেখতে পেলেন। সুদেব নিজের পরিচয় দিয়ে দময়ন্তীকে তাঁর পিতা মাতা ও পুত্রকন্যার কুশল জানালেন। ভ্রাতার প্রিয় সখা সুদেবকে দেখে দময়ন্তী কাঁদতে লাগলেন। সুনন্দার কাছে সংবাদ পেয়ে রাজমাতা তখনই সেখানে এলেন এবং সুদেবকে জিজ্ঞাসা করলেন, ব্রাহ্মণ, ইনি কার ভার্যা, কার কন্যা? আত্মীয়দের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হলেন কেন? আপনিই বা এঁকে জানলেন কি ক’রে? সুদেব নল-দময়ন্তীর ইতিহাস বিবৃত ক’রে বললেন, দেবী, এঁর অন্বেষণে আমরা সর্বত্র ভ্রমণ করেছি, এখন আপনার আলয়ে এঁকে পেলাম। এঁর অতুলনীয় রূপ এবং দুই ভ্রূর মধ্যে যে পদ্মাকৃতি জটুল রয়েছে তা দেখেই ধূমাবৃত অগ্নির ন্যায় এঁকে আমি চিনেছি।

 সানন্দা দময়ন্তীর ললাটের মল মুছিয়ে দিলেন, তখন সেই জটুল মেঘমুক্ত চন্দ্রের ন্যায় সুস্পষ্ট হ’ল। তা দেখে রাজমাতা ও সুনন্দা দময়ন্তীকে জড়িয়ে ধ’রে কাঁদতে লাগলেন। রাজমাতা অশ্রুপূর্ণ নয়নে বললেন, তুমি আমার ভগিনীর কন্যা, ওই জটুল দেখে চিনেছি। দশার্ণরাজ সুদামা তোমার মাতার ও আমার পিতা তোমার জন্মকালে দশার্ণদেশে পিতৃগৃহে আমি তোমাকে দেখেছিলাম। দময়ন্তী, তোমার পক্ষে আমার গৃহ তোমার পিতৃগৃহেরই সমান। দময়ন্তী আনন্দিত হয়ে মাতৃষ্বসাকে প্রণাম ক’রে বললেন, আমি অপরিচিত থেকেও আপনার কাছে সসুখে বাস করেছি, এখন আরও সুখে থাকতে পারব। কিন্তু মাতা, পুত্রকন্যার বিচ্ছেদে আমি শোকার্ত হয়ে আছি, অতএব আজ্ঞা দিন আমি বিদর্ভ দেশে যাব।

 রাজমাতা তাঁর পুত্রের অনুমতি নিয়ে বিশাল সৈন্যদল সহ দময়ন্তীকে মনুষ্যবাহিত যানে বিদর্ভরাজ্যে পাঠিয়ে দিলেন। রাজা ভীম আনন্দিত হয়ে সহস্র গো, গ্রাম ও ধন দান ক’রে সুদেবকে তুষ্ট করলেন। দময়ন্তী তাঁর জননীকে বললেন, যদি আমার জীবন রক্ষা করতে চান তবে আমার পতিকে আনবার চেষ্টা করুন। রাজার আজ্ঞায় ব্রাহ্মণগণ চতুর্দিকে যাত্রা করলেন। দময়ন্তী তাঁদের ব’লে দিলেন, আপনারা সকল রাষ্ট্রে জনসংসদে এই কথা বার বার বলবেন — ‘দ্যূতকার, বস্ত্রার্ধ ছিন্ন ক’রে নিদ্রিতা প্রিয়াকে অরণ্যে ফেলে কোথায় গেছ? সে এখনও অর্ধবস্ত্রে আবৃত হয়ে তোমার জন্য রোদন করছে। রাজা, দয়া কর, প্রতিবাক্য বল।’ আপনারা এইরূপ বললে কোনও লোক যদি উত্তর দেন তবে ফিরে এসে আমাকে জানাবেন, কিন্তু কেউ যেন আপনাদের চিনতে না পারে।

 দীর্ঘকাল পরে পর্ণাদ নামে এক ব্রাহ্মণ ফিরে এসে বললেন, আমি ঋতুপর্ণ