পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/২১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বনপর্ব
১৮৭

রাজকার্যের ভার দিয়ে হিমালয়ে গিয়ে গঙ্গার আরাধনা করতে লাগলেন। সহস্র দিব্য বৎসর অতীত হ’লে গঙ্গা মূর্তিমতী হয়ে দেখা দিলেন। ভগীরথ তাঁকে বললেন, আমার পূর্বপুরুষ ষাট হাজার সগরপুত্র কপিলের শাপে ভস্মীভূত হয়েছেন, আপনি তাঁদের দেহাবশেষ জলসিক্ত করুন তবে তাঁরা স্বর্গে যেতে পারবেন। গঙ্গা বললেন, মহারাজ, তোমার প্রার্থনা পূর্ণ করব, এখন তুমি মহাদেবকে তপস্যায় তুষ্ট ক’রে এই বর চাও, যেন পতনকালে আমাকে তিনি মস্তকে ধারণ করেন। ভগীরথ কৈলাস পর্বতে গিয়ে কঠোর তপস্যায় মহাদেবকে তুষ্ট করলেন, মহাদেব গঙ্গাকে ধারণ করতে সম্মত হলেন।

 ভগীরথ প্রণত হয়ে সংযতচিত্তে গঙ্গাকে স্মরণ করলেন। হিমালয় কন্যা পুণ্যতোয়া গঙ্গা মৎস্যাদি জলজন্তু সহিত গগনমেখলার ন্যায় মহাদেবের ললাটে পতিত হলেন এবং ত্রিধা বিভক্ত হয়ে প্রবাহিত হ’তে লাগলেন। ভগীরথ তাঁকে পথ দেখিয়ে সগরসন্তানগণের ভস্মরাশির নিকট নিয়ে গেলেন। গঙ্গার পবিত্র জলে সিক্ত হয়ে সগরসন্তানগণ উদ্ধার লাভ করলেন, সমুদ্র পুনর্বার জলপূর্ণ হ’ল, ভগীরথ গঙ্গাকে নিজ দুহিতারূপে কল্পনা করলেন।

২৪। ঋষ্যশৃঙ্গের উপাখ্যান

 পাণ্ডবগণ নন্দা ও অপরনন্দা নদী এবং ঋযভকূট পর্বত অতিক্রম ক’রে কৌশিকী নদীর তীরে এলেন। লোমশ বললেন, ওই বিশ্বামিত্রের আশ্রম দেখা যাচ্ছে। কশ্যপগোত্রজ মহাত্মা বিভাণ্ডকের আশ্রমও এইখানে ছিল। তাঁর পুত্র ঋষ্যশৃঙ্গের তপস্যার প্রভাবে ইন্দ্র অনাবৃষ্টির কালেও জলবর্ষণ করেছিলেন। তাঁর আখ্যান বলছি শোন।—

 একদিন বিভাণ্ডক মুনি দীর্ঘকাল তপস্যায় শ্রান্ত হয়ে কোনও মহাহ্রদে স্নান করছিলেন এমন সময় উর্বশী অপ্সরাকে দেখে তিনি কামাবিষ্ট হলেন। তৃষিতা হরিণী জলের সঙ্গে বিভাণ্ডকের শুক্র পান ক’রে গর্ভিণী হ’ল এবং যথাকালে ঋষ্যশৃঙ্গকে প্রসব করলে। এই মুনিকুমারের মস্তকে একটি শৃঙ্গ ছিল, তিনি সর্বদা ব্রহ্মচর্যে নিরত থাকতেন এবং পিতা বিভাণ্ডক ভিন্ন অন্য মানুষেও দেখেন নি। এই সময়ে অঙ্গদেশে লোমপাদ নামে এক রাজা ছিলেন, তিনি দশরথের সখা। আমরা শুনেছি, লোমপাদ ব্রাহ্মণ ও পুরোহিতের প্রতি অসদাচরণ করেছিলেন সেজন্য ব্রাহ্মণগণ তাঁকে ত্যাগ করেন এবং ইন্দ্রও জলবর্ষণে বিরত হন, তার ফলে