পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/২১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৯০
মহাভারত

যাই চলুন। বেশ্যা তাঁকে নৌকায় নিয়ে গেল এবং বিবিধ উপায়ে তাঁকে প্রলোভিত ক’রে অঙ্গদেশের অভিমুখে যাত্রা করলে। নৌকা যেখানে উপস্থিত হ’ল তার তীরদেশে লোমপাদ এক বিচিত্র আশ্রম নির্মাণ করলেন। রাজা ঋষ্যশৃঙ্গকে অন্তঃপুরে নিয়ে যাওয়ামাত্র দেবরাজ প্রচুর বৃষ্টিপাত করলেন। অঙ্গরাজের কামনা পূর্ণ হ’ল, তিনি তাঁর কন্যা শান্তাকে ঋষ্যশৃঙ্গের হস্তে সম্প্রদান করলেন!

 বিভাণ্ডক আশ্রমে ফিরে এসে পুত্রকে দেখতে না পেয়ে অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হলেন। লোমপাদের আজ্ঞায় এই কার্য হয়েছে এইরূপ অনুমান করে তিনি অঙ্গরাজধানী চম্পার অভিমুখে যাত্রা করলেন। শ্রান্ত ও ক্ষুধিত হয়ে তিনি এক গোপপল্লীতে এলে গোপগণ তাঁকে যথোচিত সংস্কার করলে, বিভাণ্ডক রাজার ন্যায় সুখে রাত্রিবাস করলেন। তিনি তুষ্ট হয়ে প্রশ্ন করলেন, গোপগণ, তোমরা কার প্রজা? লোমপাদের শিক্ষা অনুসারে তারা কৃতাঞ্জলি হয়ে উত্তর দিলে, মহর্ষি, এইসব পশু ও কৃষিক্ষেত্র আপনার পুত্রের অধিকারভুক্ত। এইরূপে সম্মান পেয়ে এবং মিষ্ট বাক্য শুনে বিভাণ্ডকের ক্রোধ দূর হ’ল, তিনি রাজধানীতে এসে লোমপাদ কর্তৃক পূজিত হয়ে এবং পত্র-পত্রবধূকে দেখে তুষ্ট হলেন। বিভাণ্ডকের আজ্ঞায় ঋষ্যশৃঙ্গ কিছুকাল অঙ্গরাজ্যে রইলেন এবং পুত্রজন্মের পর আবার পিতার আশ্রমে ফিরে গেলেন।

২৫। পরশুরামের ইতিহাস ― কার্তবীর্যার্জুন

 পাণ্ডবগণ কৌশিকী নদীর তটদেশ থেকে যাত্রা ক’রে গঙ্গাসাগরসংগম, কলিঙ্গদেশস্থ বৈতরণী নদী প্রভৃতি তীর্থ দেখে মহেন্দ্র পর্বতে এলেন। যুধিষ্ঠির পরশুরামের অনুচর অকৃতব্রণকে বললেন, ভগবান পরশুরাম কখন তপস্বীদের দর্শন দেন? আমি তাঁকে দেখতে ইচ্ছা করি। অকৃতব্রণ বললেন, আপনার আগমন তিনি জানেন, শীঘ্রই তাঁর দেখা পাবেন। চতুর্দশী ও অষ্টমী তিথিতে তিনি দেখা দেন, এই রাত্রি অতীত হ’লেই চতুর্দশী পড়বে। তার পর যুধিষ্ঠিরের অনুরোধে অকৃতব্রণ পরশুরামের এই ইতিহাস বললেন।—

 হৈহয়রাজ কার্তবীর্যের সহস্র বাহু ছিল, মহর্ষি দত্রাত্রেয়র বরে তিনি স্বর্ণময় বিমান এবং পৃথিবীর সকল প্রাণীর উপর আধিপত্য লাভ করেছিলেন। তাঁর উপদ্রবে পীড়িত হয়ে দেবগণ ও ঋষিগণ বিষ্ণুকে বললেন, আপনি কার্তবীর্যকে বধ ক’রে প্রাণীদের রক্ষা করুন। বিষ্ণু সম্মত হয়ে তাঁর স্বকীয় আশ্রম বদরিকায় গেলেন। এই সময়ে খ্যাতনামা মহাবল গাধি কান্যকুব্জে রাজত্ব করতেন, তাঁর অপ্সরার ন্যায়