পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/২৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বনপর্ব
২০৯

উত্তর দিকে যাত্রা করলেন। পাণ্ডবদের সহচর ব্রাহ্মণগণ বৃষপর্বার আশ্রমেই রইলেন। যুধিষ্ঠিরাদি, দ্রৌপদী, লোমশ ও ধৌম্য চতুর্থ দিনে কৈলাস পর্বতের নিকটস্থ হলেন। তার পর তাঁরা মাল্যবান পর্বত অতিক্রম করে রমণীয় গন্ধমাদন পর্বতে রাজর্ষি আর্ষ্টিষেণের আশ্রমে এলেন। উগ্রতপা কৃশকায় সর্বধর্মজ্ঞ আর্ষ্টিষেণ তাঁদের সাদরে গ্রহণ করে বললেন, বৎস যুধিষ্ঠির, তোমরা এখানেই অর্জুনের জন্য অপেক্ষা কর। পাণ্ডবগণ সুস্বাদু ফল, বাণহত মৃগের পবিত্র মাংস, পবিত্র মধু, এবং মুনিগণের অন্যান্য খাদ্য খেয়ে এবং লোমশের মুখে বিবিধ কথা শুনে বনবাসের পঞ্চম বর্ষ যাপন করলেন।

 ঘটোৎকচ তাঁর অনুচরদের সঙ্গে চ’লে গেলেন। একদিন দ্রৌপদী ভীমকে বললেন, তোমার ভ্রাতা অর্জুন খাণ্ডবদাহকালে গন্ধর্ব নাগ রাক্ষস এবং ইন্দ্রকেও নিবারিত করেছিলেন। তিনি দারুণ মায়াবীদের বধ করেছেন, গাণ্ডীব ধনুও লাভ করেছেন। তোমারও ইন্দ্রের ন্যায় তেজ ও অজেয় বাহুবল আছে। তুমি এখানকার রাক্ষসদের বিতাড়িত করে দাও, আমরা সকলে এই রমণীয় পর্বতের উপরিভাগ দেখব।

 মহাবৃষ যেমন প্রহার সইতে পারে না, ভীম সেইরূপ দ্রৌপদীর তিরস্কারতুল্য বাক্য সইতে পারলেন না, সশস্ত্র হয়ে পর্বতশৃঙ্গে উঠলেন। সেখান থেকে তিনি কুবেরভবন দেখতে পেলেন। তার প্রাসাদসমূহ কাঞ্চন ও স্ফটিকে নির্মিত, সর্বদিক স্বর্ণপ্রাচীরে বেষ্টিত এবং নানাপ্রকার উদ্যানে শোভিত। কিছুক্ষণ বিষণ্ণমনে নিশ্চল হয়ে কুবেরপুরী দেখে ভীম শঙ্খধ্বনি ও জ্যানির্ঘোষ ক’রে করতালি দিলেন। শব্দ শুনে যক্ষ রাক্ষস ও গন্ধর্বগণ বেগে আক্রমণ করতে এল। ভীমের অস্ত্রাঘাতে অনেকে বিনষ্ট হ’ল, অবশিষ্ট সকলে পালিয়ে গেল। তখন কুবেরসখা মণিমান নামক মহাবল রাক্ষস শক্তি শূল ও গদা নিয়ে যুদ্ধ করতে এলেন, কিন্তু ভীম তাঁকেও গদাঘাতে বধ করলেন।

 যুদ্ধের শব্দ শুনে যুধিষ্ঠির দ্রৌপদীকে আর্ষ্টিষেণের কাছে রেখে নকুল-সহদেবের সঙ্গে সশস্ত্র হয়ে পর্বতের উপরে উঠলেন। মহাবাহু ভীম বহু রাক্ষস সংহার ক’রে ধন, আর গদা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন দেখে যুধিষ্ঠির তাঁকে আলিঙ্গন করে বললেন, ভীম, তুমি হঠকারিতার বশে অকারণে রাক্ষস বধ করেছ, তাতে দেবতারা রুদ্ধ হবেন। এমন কার্য আর ক’রো না।

 ভীম দ্বিতীয়বার রাক্ষসদের বধ করেছেন শুনে কুবের ক্রুদ্ধ হয়ে পুষ্পক বিমানে গন্ধমাদন পর্বতে এলেন। পাণ্ডবগণ রোমাঞ্চিত হয়ে যক্ষ-রাক্ষস-