পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/২৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৪০
মহাভারত

শীঘ্র দ্বৈতবনে গিয়ে পাপী পাণ্ডবগণ আর সেখানকার ব্রাহ্মণগণকে নিমন্ত্রণ করে এস। দূতের বার্তা শুনে যুধিষ্ঠির বললেন, রাজা দুর্যোধন ভাগ্যবান তাই এই মহাযজ্ঞ করছেন, এতে তাঁর পূর্বপুরুষদের কীর্তি বৃদ্ধি পাবে। আমরাও তাঁর কাছে যাব বটে, কিন্তু এখন নয়, ত্রয়োদশ বর্ষ পূর্ণ হ’লে। ভীম বললেন, তের বৎসর পরে যখন যুদ্ধযজ্ঞে অস্ত্রশস্ত্রে অগ্নি প্রজ্বলিত হবে আর সেই অগ্নিতে দুর্যোধনকে ফেলা হবে তখন যুধিষ্ঠির যাবেন; যখন ধার্তরাষ্ট্ররা সেই যজ্ঞাগ্নিতে দগ্ধ হবে আর পাণ্ডবগণ তাতে ক্রোধরূপ হবি অর্পণ করবেন তখন আমি যাব; দূত, এই কথা দুর্যোধনকে জানিও।

 যজ্ঞ সমাপ্ত হ’লে কয়েকজন বায়ুরোগগ্রস্ত লোক দুর্যোধনকে বললে, আপনার এই যজ্ঞ যুধিষ্ঠিরের যজ্ঞের তুল্য হয় নি। কেউ বললে, ষোল কলার এক কলাও হয় নি। সুহৃদগণ বললেন, এই যজ্ঞ সকল যজ্ঞকে অতিক্রম করেছে। কর্ণ বললেন, রাজা, পাণ্ডবরা যুদ্ধে বিনষ্ট হ’লে তুমি রাজসূয় যজ্ঞ করবে। আমি যা বলছি শোন— যত দিন অর্জুন নিহত না হবে তত দিন আমি পা ধোব না, মাংস খাব না, সুরাপান করব না, কেউ কিছু চাইলে ‘না’ বলব না।


॥ মৃগস্বপ্নোদ্ভব ও ব্রীহিদ্রৌণিক-পর্বাধ্যায়॥

৫০। যুধিষ্ঠিরের স্বপ্ন ― মুদ্‌গলের সিদ্ধিলাভ

 একদা রাত্রিকালে যুধিষ্ঠির স্বপ্ন দেখলেন, মৃগগণ কম্পিতদেহে বাষ্পাকুলকণ্ঠে কৃতাঞ্জলি হয়ে তাঁকে বলছে, মহারাজ, আমরা দ্বৈতবনের হতাবশিষ্ট মৃগ। আপনার অস্ত্রপটু বীর ভ্রাতারা আমাদের অল্পই অবশিষ্ট রেখেছেন। আপনি দয়া করুন, যাতে আমরা বৃদ্ধি পেতে পারি। যুধিষ্ঠির দুঃখার্ত হয়ে বললেন, যা বললে তাই হবে। প্রভাতকালে তিনি স্বপ্নবৃত্তান্ত জানিয়ে ভ্রাতাদের বললেন, এখনও এক বৎসর আট মাস আমাদের মৃগমাংসভোজী হয়ে বনবাস করতে হবে। আমরা দ্বৈতবন ত্যাগ ক’রে আবার কাম্যকবনে যাব, সেখানে অনেক মৃগ আছে।

 পাণ্ডবগণ কাম্যকবনে এলেন, সেখানে তাঁদের কষ্টকর বনবাসের একাদশ বর্ষ অতীত হ’ল। একদিন মহাযোগী ব্যাসদেব তাঁদের কাছে এলেন এবং উপদেশপ্রসঙ্গে এই উপাখ্যান বললেন।— কুরুক্ষেত্রে মুদ্‌গল নামে এক