জয়দ্রথ ধরতে এলে দ্রৌপদী তাঁকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলেন এবং পুরোহিত ধৌম্যকে ডাকতে লাগলেন। জয়দ্রথ ভূমি থেকে উঠে দ্রৌপদীকে সবলে রথে তুললেন। ধৌম্য এসে বললেন, জয়দ্রথ, তুমি ক্ষত্রিয়ের ধর্ম পালন কর, মহাবল পাণ্ডবদের পরাজিত না ক’রে তুমি এঁকে নিয়ে যেতে পার না। এই নীচ কর্মের ফল তোমাকে নিশ্চয়ই ভোগ করতে হবে। এই ব’লে ধৌম্য পদাতি সৈন্যের সঙ্গে মিশে দ্রৌপদীর পশ্চাতে চললেন।
৫৩। জয়দ্রথের নিগ্রহ ও মুক্তি
পাণ্ডবগণ মৃগয়া শেষ করে বিভিন্ন দিক থেকে এসে একত্র মিলিত হলেন। বনমধ্যে পশুপক্ষীর রব শুনে যধিষ্ঠির বললেন, আমার মন ব্যাকুল হচ্ছে, আর মৃগবধের প্রয়োজন নেই। এই ব’লে তিনি ভ্রাতাদের সঙ্গে রথারোহণে দ্রুতবেগে আশ্রমের দিকে চললেন। দ্রৌপদীর প্রিয়া ধাত্রীকন্যা ভূমিতে পড়ে কাঁদছে দেখে যুধিষ্ঠিরের সারথি ইন্দ্রসেন রথ থেকে লাফিয়ে নেমে জিজ্ঞাসা করলে, তুমি মলিনমুখে কাঁদছ কেন? দেবী দ্রৌপদীর কোনও বিপদ হয় নি তো? বালিকা তার সুন্দর মুখে মুছে বললে, জয়দ্রথ তাঁকে সবলে হরণ করে নিয়ে গেছেন, তোমরা শীঘ্র তাঁর অনুসরণ কর। পুষ্পমালা যেমন শ্মশানে পড়ে, বিপ্রগণ অসতর্ক থাকলে কুকুর যেমন যজ্ঞের সোমরস চাটে, সেইরূপ ভয়বিহ্বলা দ্রৌপদীকে হয়তো কোনও অযোগ্য পুরুষ ভোগ করবে।
যধিষ্ঠির বললেন, তুমি স’রে যাও, এমন কুৎসিত কথা বলো না। এই ব’লে তিনি ভ্রাতাদের সঙ্গে দ্রুতবেগে দ্রৌপদীর অনুসরণে যাত্রা করলেন। কিছুদূর গিয়ে তাঁরা দেখলেন, সৈন্যদের অশ্বখুরের ধূলি উড়ছে, ধৌম্য উচ্চস্বরে ভীমকে ডাকছেন। পাণ্ডবগণ তাঁকে আশ্বস্ত করলেন এবং জয়দ্রথের রথে দ্রৌপদীকে দেখে ক্রোধে প্রজ্বলিত হলেন। পাণ্ডবদের ধ্বজাগ্র দেখেই দুরাত্মা জয়দ্রথের ভয় হ’ল, তিনি তাঁর সহায় রাজ়াদের বললেন, আপনারা আক্রমণ করুন। তখন দুই পক্ষে ঘোর যুদ্ধ হ’তে লাগল, পাণ্ডবগণের প্রত্যেকেই শত্রুপক্ষের বহু যোদ্ধাকে বধ করলেন। কোটিকাস্য ভীমের গদাঘাতে নিহত হলেন। স্বপক্ষের বীরগণকে বিনাশিত দেখে জয়দ্রথ দ্রৌপদীকে রথ থেকে নামিয়ে দিয়ে প্রাণরক্ষার জন্য বনমধ্যে পলায়ন করলেন। যুধিষ্ঠির দ্রৌপদীকে নিজের রথে উঠিয়ে নিলেন। ভীম বললেন, দ্রৌপদী নকুল-সহদেব আর ধৌম্যকে নিয়ে আপনি আশ্রমে ফিরে যান।