পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৩১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৮৪
মহাভারত

ও শাল্ব দেশীয় যোদ্ধারা তাঁকে বহুবার পরাজিত করেছিল। তিনি দুর্যোধনকে বললেন, মৎস্যরাজ বিরাট আমার রাজ্যে অনেক বার উৎপীড়ন করেছেন, কারণ মহাবীর কীচক তাঁর সেনাপতি ছিলেন। সেই নিষ্ঠুর দুরাত্মা কীচককে গন্ধর্বরা বধ করেছে, তার ফলে বিরাট এখন অসহায় ও নিরুৎসাহ হয়েছেন। আমার মতে এখন বিরাটের বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রা করা উচিত। আমরা তাঁর ধনরত্ন, গ্রামসমূহ বা রাষ্ট্র অধিকার করব, বহু সহস্র গো হরণ করব। কিংবা তাঁর সঙ্গে সন্ধি ক’রে তাঁর পৌরুষ নষ্ট করব, অথবা তাঁর সমস্ত সৈন্য সংহার ক’রে তাঁকে বশে আনব; তাতে আপনার বলবৃদ্ধি হবে।

 কর্ণ বললেন, সুশর্মা কালোচিত হিতবাক্য বলেছেন। আমাদের সেনাদল একত্র বা বিভক্ত হয়ে যাত্রা করুক। অর্থহীন বলহীন পৌরুষহীন পাণ্ডবদের জন্য আমাদের ভাববার প্রয়োজন কি, তারা অন্তর্হিত হয়েছে অথবা যমালয়ে গেছে। এখন আমরা নিরুদ্‌বেগে বিরাটরাজ্য আক্রমণ ক’রে গো এবং বিবিধ ধনরত্ন হরণ করব।

 কৃষ্ণপক্ষের সপ্তমীর দিন সুশর্মা সসৈন্যে বিরাটরাজ্যের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে উপস্থিত হলেন। পরদিন কৌরবগণও গেলেন।

১১। দক্ষিণগোগ্রহ[১] ― সুশর্মার পরাজয়

 পাণ্ডবগণের নির্বাসনের ত্রয়োদশ বর্ষ যেদিন পূর্ণ হ’ল সেই দিনে সুশর্মা বিরাটের বহু গোধন হরণ করলেন। একজন গোপ বেগে রাজসভায় গিয়ে বিরাটকে বললে, মহারাজ, ত্রিগর্তদেশীয়গণ আমাদের নির্জিত ক’রে শতসহস্র গো হরণ করেছে। বিরাট তখনই তাঁর সেনাদলকে প্রস্তুত হ’তে আজ্ঞা দিলেন। বিরাট, তাঁর ভ্রাতা শতানীক এবং জ্যেষ্ঠ রাজপত্রে শঙ্খ রত্নভূষিত অভেদ্য বর্ম পরে সজ্জিত হলেন। বিরাট বললেন, কঙ্ক বল্লব তন্তিপাল ও গ্রন্থিক এঁরাও বীর্যবান এবং যুদ্ধ করতে সমর্থ, এঁদেরও অস্ত্রশস্ত কবচ আর রথ দাও। রাজার আজ্ঞানুসারে শতানীক যুধিষ্ঠিরাদিকে অস্ত্র রথ ইত্যাদি দিলেন, তাঁরা আনন্দিত হয়ে মৎস্যরাজের বাহিনীর সঙ্গে যাত্রা করলেন। মধ্যাহ্ন অতীত হ’লে মৎস্যসেনার সঙ্গে ত্রিগর্তসেনার স্পর্শ হ’ল।

 দুই সৈন্যদলে তুমুল যুদ্ধ হ’তে লাগল। সুশর্মা ও বিরাট দ্বৈরথ যুদ্ধে

  1. বিরাট রাজ্যের দক্ষিণে যে সব গরু ছিল তাদের গ্রহণ বা হরণ।