পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৩১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিরাটপর্ব
২৮৭

 অর্জুন তখন উত্তরার সম্মুখে অনেক প্রকার কৌতুকজনক কর্ম করলেন। তিনি উলটো ক’রে কবচ পরতে গেলেন, তা দেখে কুমারীরা হেসে উঠল। তখন উত্তর স্বয়ং তাঁকে মহামূল্য কবচ পরিয়ে দিলেন। যাত্রাকালে উত্তরা ও তাঁর সখীরা বললেন, বৃহন্নলা, তুমি ভীষ্ম-দ্রোণাদিকে জয় করে আমাদের পুত্তলিকার জন্য বিচিত্র সূক্ষ্ম কোমল বস্ত্র এনো। অর্জুন সহাস্যে বললেন, উত্তর যদি জয়ী হন তবে নিশ্চয় সুন্দর সুন্দর বস্ত্র আনব।

 অর্জুন বায়ুবেগে রথ চালালেন। কিছুদূর গিয়ে শ্মশানের নিকটে এসে উত্তর দেখতে পেলেন, বহু বৃক্ষসমন্বিত বনের ন্যায় বিশাল কৌরবসৈন্য ব্যূহ রচনা ক’রে রয়েছে, সাগরগর্জনের ন্যায় তাদের শব্দ হচ্ছে। ভয়ে রোমাঞ্চিত ও উদ্‌বিগ্ন হয়ে উত্তর বললেন, আমি কৌরবদের সঙ্গে যুদ্ধ করব না, ওদের মধ্যে অনেক মহাবীর আছেন যাঁরা দেবগণেরও অজেয়। আমার পিতা সমস্ত সৈন্য নিয়ে গেছেন, আমার সৈন্য নেই, আমি বালক, যুদ্ধে অনভিজ্ঞ। বৃহন্নলা, তুমি ফিরে চল।

 অর্জুন বললেন, রাজপুত্র, তুমি যাত্রা করবার সময় স্ত্রী আর পুরুষদের কাছে অনেক গর্ব করেছিলে, এখন পশ্চাৎপদ হচ্ছ কেন? তুমি যদি অপহৃত গোধন উদ্ধার না করে ফিরে যাও তবে সকলেই উপহাস করবে। সৈরিন্ধ্রী আমার সারথ্য কর্মের প্রশংসা করেছেন, আমি কৃতকার্য না হয়ে ফিরব না। উত্তর বললেন, কৌরবরা সংখ্যায় অনেক, তারা আমাদের ধন হরণ করুক, স্ত্রীপুরুষেও আমাকে উপহাস করুক। এই ব’লে উত্তর রথ থেকে লাফিয়ে নামলেন এবং মান দর্প ও ধনুর্বাণ ত্যাগ করে বেগে পালালেন। অর্জুন তাঁকে ধরবার জন্য পিছনে ছটলেন।

 রক্তবর্ণ বস্ত্র প’রে দীর্ঘ বেণী দুলিয়ে অর্জুনকে ছুটতে দেখে কয়েকজন সৈনিক হাসতে লাগল। কৌরবগণ বললেন, ভস্মাচ্ছাদিত অগ্নির ন্যায় এই লোকটি এর রূপ কতকটা পুরুষের কতকটা স্ত্রীর মত। এর মস্তক গ্রীবা বাহু ও গতি অর্জুনের তুল্য। বোধ হয় বিরাটের পুত্র আমাদের দেখে ভয়ে পালাচ্ছে আর অর্জুন তাকে ধরতে যাচ্ছেন।

 অর্জন এক শ পা গিয়ে উত্তরের চুল ধরলেন। উত্তর কাতর হয়ে বললেন, কল্যাণী সুমধ্যমা বৃহন্নলা, তুমি কথা শোন, রথ ফেরাও, বেঁচে থাকলেই মানুষের মঙ্গল হয়। আমি তোমাকে শত স্বর্ণমুদ্রা, স্বর্ণে গ্রথিত আটটি বৈদূর্য মণি, স্বর্ণধ্বজযুক্ত অশ্বসমেত একটি রথ এবং দশটি মত্ত মাতঙ্গ দেব, তুমি আমাকে ছেড়ে দাও। অর্জুন সহাস্যে উত্তরকে রথের কাছে টেনে এনে বললেন, তুমি যদি না পার