পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৩৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩২২
মহাভারত

সজ্জন, যা কিছু এঁদের দান করেছি তার প্রতিদান এঁরা নিশ্চয় করবেন। এঁরা আমার পুত্রের পক্ষে থাকবেন এবং যুদ্ধশেষ পর্যন্ত সৈন্যগণের অগ্রণী হবেন। কিন্তু দ্রোণ ও কর্ণ অর্জুনের বিপক্ষে দাঁড়ালেও জয় সম্বন্ধে আমার সংশয় রয়েছে, কারণ কর্ণ ক্ষমাশীল ও অসতর্ক এবং দ্রোণাচার্য স্থবির ও অর্জুনের গুরু। শুনেছি তিন তেজ একই রথে মিলিত হবে—কৃষ্ণ, অর্জুন ও গাণ্ডীব ধনু। আমাদের তেমন সারথি নেই, যোদ্ধা নেই, ধনও নেই। কৌরবগণ, যুদ্ধ করা আমি ভাল মনে করি না। আপনারা ভেবে দেখুন, যদি আপনাদের মত হয় তবে আমি শান্তির চেষ্টা করব।

 সঞ্জয় বললেন, মহারাজ, আপনি ধীরবুদ্ধি, অর্জুনের পরাক্রমও জানেন, তথাপি কেন পুত্রদের বশে চলেন জানি না। দ্যূতসভায় পাণ্ডবদের প্রতিবার পরাজয় শুনে আপনি বালকের ন্যায় হেসেছিলেন। তাঁদের যে কটুবাক্য বলা হয়েছিল তা আপনি উপেক্ষা করেছিলেন। তাঁরা যখন বনে যান তখনও আপনি বার বার হেসেছিলেন। এখন আপনি অসহায়ের ন্যায় বৃথা বিলাপ করছেন। ভীমার্জুন যাঁর পক্ষে যুদ্ধ করবেন তিনিই নিখিল বসুধার রাজা হবেন। এখন আপনার দুরাত্মা পুত্র ও তার অনুগামীদের সর্ব উপায়ে নিবৃত্ত করুন।

 দুর্যোধন বললেন, মহারাজ, ভয় পাবেন না। পাণ্ডবরা বনে গেলে কৃষ্ণ, কেকয়গণ, ধষ্টকেতু, ধৃষ্টদ্যুম্ন ও বহু রাজা সসৈন্যে ইন্দ্রপ্রস্থের নিকটে এসে আমাদের নিন্দা করেছিলেন। তাঁরা বলেছিলেন, পাণ্ডবদের উচিত কৌরবদের উচ্ছেদ ক’রে পুনর্বার রাজ্য অধিকার করা। গুপ্তচরের মুখে এই সংবাদ পেয়ে আমার ধারণা হয় যে পাণ্ডবরা তাঁদের বনবাসের প্রতিজ্ঞা পালন করবেন না, যুদ্ধে আমাদের পরাস্ত করবেন। সেই সময়ে আমাদের মিত্র ও প্রজারা সকলেই ক্রুদ্ধ হয়ে আমাদের ধিক্‌কার দিচ্ছিল। তখন আমি ভীষ্ম দ্রোণ কৃপ ও অশ্বত্থামাকে বললাম, পিতা আমার জন্য দুঃখ ভোগ করছেন, অতএব সন্ধি করাই ভাল। তাতে ভীষ্মদ্রোণাদি আমাকে আশ্বাস দিলেন, ভয় পেয়ো না, যুদ্ধে কেউ আমাদের জয় করতে পারবে না। মহারাজ, অমিততেজা ভীষ্মদ্রোণাদির তখন এই দৃঢ় ধারণা ছিল। এখন পাণ্ডবগণ পূর্বাপেক্ষা বলহীন হয়েছে, সমস্ত পৃথিবী আমাদের বশে এসেছে, যে রাজারা আমাদের পক্ষে যোগ দিয়েছেন তাঁরা সুখে দুঃখে আমাদেরই অংশভাগী হবে, অতএব আপনি ভয় দূর করুন। আমাদের সৈন্যসমাবেশে যুধিষ্ঠির ভীত হয়েছেন তাই তিনি পাঁচটি গ্রাম চেয়েছেন, তাঁর রাজধানী চান নি। বৃকোদরের বল সম্বন্ধে আপনি যা মনে করেন তা মিথ্যা। আমি যখন বলরামের কাছে অস্ত্রশিক্ষা করতাম তখন সকলে