পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৩৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
উদ্‌যোগপর্ব
৩২৯

কথা বলবে তখন আমার এই বেণী স্মরণ ক’রো—যা দুঃশাসন হাত দিয়ে টেনেছিল। ভীমার্জুন যদি সন্ধি কামনা করেন তবে আমার বৃদ্ধ পিতা ও তাঁর মহারথ পুত্রগণ কৌরবদের সঙ্গে যুদ্ধ করবেন, অভিমন্যুকে অগ্রবর্তী ক’রে আমার পাঁচ বীর পুত্রও যুদ্ধ করবে, দুঃশাসনের শ্যামবর্ণ বাহু যদি ছিন্ন ও ধূলিলণ্ঠিত না দেখি তবে আমার হৃদয় কি ক’রে শান্ত হবে? প্রদীপ্ত অগ্নির ন্যায় ক্রোধ নিরুদ্ধ রেখে আমি তের বৎসর কাটিয়েছি, এখন ধর্মভীরু ভীমের শান্ত বাক্য শুনে আমার হৃদয় বিদীর্ণ হচ্ছে। এই ব’লে দ্রৌপদী অশ্রুধারায় বক্ষ সিক্ত করে কম্পিতদেহে গদ্‌গদকণ্ঠে রোদন করতে লাগলেন।

 কৃষ্ণ বললেন, ভাবিনী, যাদের উপর তুমি ক্রুদ্ধ হয়েছ সেই কৌরবগণ সসৈন্যে সবান্ধবে বিনষ্ট হবে, তাদের ভার্যারা রোদন করবে। ধৃতরাষ্ট্রের পুত্রগণ যদি আমার কথা না শোনে তবে তারা নিহত হয়ে ভূমিতে পড়ে শৃগালকুক্করের খাদ্য হবে। হিমালয় যদি বিচলিত হয়, মেদিনী যদি শতধা বিদীর্ণ হয়, নক্ষত্রসমেত আকাশ যদি পতিত হয়, তথাপি আমার কথা ব্যর্থ হবে না। কৃষ্ণা, অশ্রুসংবরণ কর, তুমি শীঘ্রই দেখতে পাবে তোমার পতিগণ শত্রুবধ ক’রে রাজশ্রী লাভ করেছেন।

১১। কৃষ্ণের হস্তিনাপুরগমন

 শরৎকালের অন্তে কার্তিক মাসে একদিন প্রভাতকালে শভ মুহূর্তে কৃষ্ণ স্নানাহ্ণিক ক’রে সূর্য ও অগ্নির উপাসনা করলেন। তার পর তিনি শুভযাত্রার জন্য বৃষস্পর্শ, ব্রাহ্মণদের অভিবাদন এবং অগ্নি প্রদক্ষিণ ক’রে শিনির পৌত্র সাত্যকিকে বললেন, শঙ্খ চক্র গদা তূণীর শক্তি ও অন্যান্য সর্বপ্রকার অস্ত্র আমার রথে রাখ, কারণ শত্রুকে অবজ্ঞা করা উচিত নয়। কৃষ্ণের পরিচারকগণ তাঁর রথ প্রস্তুত করলে। এই রথ চতুরশ্বযোজিত, অর্ধচন্দ্র চন্দ্র মৎস্য পশু পক্ষী ও পুষ্পের চিত্রে শোভিত, স্বর্ণ ও মণিরত্নে ভূষিত, এবং ব্যাঘ্রচর্মে আবৃত। রথের উপরে গরুড়ধ্বজ স্থাপিত হলে কৃষ্ণ সাত্যকিকে তুলে নিলেন। বশিষ্ঠ বামদেব শুক্র নারদ প্রভৃতি দেবর্ষি ও মহর্ষিগণ কৃষ্ণের দক্ষিণ দিকে দাঁড়ালেন। পাণ্ডবগণ এবং দ্রুপদ বিরাট প্রভৃতি কিছুদূর অনুগমন করলেন।

 যুধিষ্ঠির বললেন, জনার্দন, যিনি আমাদের বাল্যকাল থেকে বর্ধিত করেছেন, দুর্যোধনের ভয় ও মৃত্যুসংকট থেকে রক্ষা করেছেন, আমাদের জন্য বহু দুঃখ ভোগ করেছেন, পুত্রবিরহবিধুরা আমাদের সেই মাতাকে তুমি অভিবাদন ও আলিঙ্গন ক’রে