পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৩৮৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৬০
মহাভারত

তাকে খেয়ে ফেললে। তখন কোলিক নামে এক অতি বৃদ্ধ মূষিক বললে, এঁর শিখাধারণ ছল মাত্র, এর বিষ্ঠায় লোম দেখা যায়, কিন্তু ফলমূলভোজীর বিষ্ঠায় তা থাকে না। ইনি স্থূল হচ্ছেন এবং আমাদের দল ক্ষীণ হচ্ছে, সাত আট দিন থেকে ডিণ্ডিককেও দেখছি না। এই কথা শুনে মূষিকরা পালিয়ে গেল, দুষ্ট বিড়ালও তার পূর্ব স্থানে ফিরে গেল। দুরাত্মা যুধিষ্ঠির, তুমিও বৈড়াল ব্রত অবলম্বন ক’রে জ্ঞাতিদের প্রতারিত করছ। তুমি পাঁচটি গ্রাম চেয়েছিলে, আমি তা দিই নি, কারণ আমার এই ইচ্ছা যে তুমি ক্রুদ্ধ হয়ে যুদ্ধ কর। তুমি কৃষ্ণকে দিয়ে ব’লে পাঠিয়েছিলে যে তুমি শান্তি ও সমর দুইএর জন্যই প্রস্তুত আছ। আমি যুদ্ধের আয়োজন করেছি, এখন তুমি ক্ষত্রিয়ের ধর্ম পালন কর।

 উলূক, তুমি কৃষ্ণকে বলবে, কৌরবসভায় যে মায়ারূপ দেখিয়েছিলে সেই রূপ ধারণ করে আমার প্রতি ধাবিত হও। ইন্দ্রজাল মায়া কুহক বা বিভীষিকা দেখলে অস্ত্রধারী বীর ভয় পায় না, সিংহনাদ করে। আমরাও বহু প্রকার মায়া দেখাতে পারি, কিন্তু তেমন উপায়ে কার্যসিদ্ধি করতে চাই না। কৃষ্ণ, তুমি অকস্মাৎ যশস্বী হয়ে উঠেছ, কিন্তু আমরা জানি পুংশ্চিহ্নধারী নপুংসক অনেক আছে। তুমি কংসের ভৃত্য ছিলে সেজন্য আমার তুল্য কোনও রাজা তোমার সঙ্গে যুদ্ধ করেন নি।

 উলূক, তুমি সেই শৃঙ্গহীন বৃষ বহুভোজী মূর্খ ভীমকে বলবে, বিরাটনগরে তুমি বল্লব নামে পাচক হয়ে ছিলে, তা আমারই পৌরুষের ফল। দ্যূতসভায় যে প্রতিজ্ঞা করেছিলে তা যেন মিথ্যা না হয়, যদি শক্তি থাকে তবে দুঃশাসনের রক্ত পান কর। নকুল-সহদেবকে বলবে, দ্রৌপদীর কষ্ট স্মরণ ক’রে এখন যুদ্ধে তোমাদের পৌরুষ দেখাও। বিরাট আর দ্রুপদকে বলবে, প্রভু ও ভৃত্য পরস্পরের গুণাগুণ বিচার করে না, তাই গৌরবহীন যুধিষ্ঠির আপনাদের প্রভু হয়েছে। ধৃষ্টদ্যুম্নকে বলবে, তুমি দ্রোণের সঙ্গে পাপযুদ্ধ করবে এস। শিখণ্ডীকে বলবে, তুমি নির্ভয়ে যুদ্ধ করতে এস, ভীষ্ম তোমাকে স্ত্রী মনে করেন, তোমাকে বধ করবেন না।

 উলূক, তুমি অর্জুনকে বলবে, রাজ্য থেকে নির্বাসন, বনবাস, এবং দ্রৌপদীর ক্লেশ স্মরণ ক’রে এখন পুরুষত্ব দেখাও। লৌহময় অস্ত্রসমূহের সংস্কার হয়েছে, কুরুক্ষেত্রে কর্দম নেই, অশ্বসকল খাদ্য পেয়ে পুষ্ট হয়ে আছে, যোদ্ধারাও বেতন পেয়েছে, অতএব কেশবের সঙ্গে এসে কালই যুদ্ধ কর। তুমি কূপমণ্ডুক তাই দুর্ধর্ষ বিশাল কৌরবসেনার স্বরূপ বঝতে পারছ না। বাসুদেব তোমার সহায় তা জানি, তোমার গাণ্ডীব চার হাত দীর্ঘ তাও জানি, তোমার তুল্য যোদ্ধা নেই তাও জানি; তথাপি তোমাদের রাজ্য হরণ ক’রে তের বৎসর ভোগ করেছি। দ্যূতসভায়