পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৩৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ভীষ্মপর্ব

॥ জম্বুখণ্ডবিনির্মাণ- ও ভূমি-পর্বাধ্যায় ॥

১। যুদ্ধের নিয়মবন্ধন

 পাণ্ডবগণ কুরুক্ষেত্রের পশ্চিম ভাগে সসৈন্যে পূর্বমুখ হয়ে অবস্থান করলেন। স্বপক্ষ যাতে চেনা যায় সেই উদ্দেশ্যে যুধিষ্ঠির ও দুর্যোধন নিজ নিজ বিবিধ সৈন্যদলের বিভিন্ন নাম রাখলেন এবং পরিচয়সূচক আভরণ দিলেন।

 অনন্তর রথারূঢ় বাসুদেব ও ধনঞ্জয় তাঁদের পাঞ্চজন্য ও দেবদত্ত নামক দিব্য শঙ্খ বাজালেন। সেই নির্ঘোষ শুনে পাণ্ডবপক্ষীয় সৈন্যরা হৃষ্ট হ’ল, বিপক্ষ সৈন্য ও তাদের বাহনগণ ভয়ে মলমূত্র ত্যাগ করলে। ভূমি থেকে ধূলি উঠে সর্ব দিকে ব্যাপ্ত হ’ল, কিছুই দেখা গেল না, সূর্য যেন অস্তমিত হলেন। বায়ুর সঙ্গে কাঁকর উড়ে সৈন্যগণকে আঘাত করতে লাগল। কুরুক্ষেত্রে দুই পক্ষের বিপুল সৈন্যসমাবেশের ফলে বোধ হ’ল যেন পৃথিবীর অন্যত্র বালক বৃদ্ধ ও স্ত্রী ভিন্ন অন্য মানুষ বা অশ্ব রথ হস্তী অবশিষ্ট নেই।

 যুদ্ধারম্ভের পূর্বে উভয় পক্ষের সম্মতিতে এইসকল নিয়ম অবধারিত হ’ল।— যুদ্ধ নিবৃত্ত হ’লে বিরোধী দলের মধ্যে যথাসম্ভব পূর্ববৎ প্রীতির সম্বন্ধ স্থাপিত হবে, আর ছলনা থাকবে না। এক পক্ষ বাগ্‌যুদ্ধে প্রবৃত্ত হ’লে অপর পক্ষ বাক্য দ্বারাই প্রতিযুদ্ধ করবেন। যারা সৈন্যদল থেকে বেরিয়ে আসবে তাদের হত্যা করা হবে না। রথীর সঙ্গে রথী, গজারোহীর সঙ্গে গজারোহী, অশ্বারোহীর সঙ্গে অশ্বারোহী, এবং পদাতির সঙ্গে পদাতি যুদ্ধ করবে। বিপক্ষকে আগে জানাতে হবে, তার পর নিজের যোগ্যতা ইচ্ছা উৎসাহ ও শক্তি অনুসারে আক্রমণ করা যেতে পারবে, কিন্তু বিশ্বস্ত বা বিহ্বল লোককে প্রহার করা হবে না। অন্যের সঙ্গে যুদ্ধে রত, শরণাগত, যুদ্ধে বিমুখ, অস্ত্রহীন বা বর্মহীন লোককে কখনও মারা হবে না। স্তুতিপাঠক সূত, ভারবাহক, অস্ত্র যোগানো যাদের কাজ, এবং ভেরী প্রভৃতির বাদ্যকারকে কখনও প্রহার করা হবে না।