পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৪১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ভীষ্মপর্ব
৩৯১

১০। ঘটোৎকচের জয়

(চতুর্থ দিনের যুদ্ধ)

 পরদিন প্রভাতে ভীষ্ম সসৈন্যে মহাবেগে অর্জুনের অভিমুখে ধাবিত হলেন। অশ্বত্থামা ভূরিশ্রবা শল্য শল্যপুত্র ও চিত্রসেনের সঙ্গে অভিমন্যুর যুদ্ধ হ’তে লাগল। ধৃষ্টদ্যুম্ন গদাঘাতে শল্যপুত্রের মস্তক চূর্ণ করলেন। শল্য অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হয়ে ধৃষ্টদ্যুম্নকে আক্রমণ করলেন, দুর্যোধন দুঃশাসন বিকর্ণ প্রভৃতি শল্যের রথ রক্ষা করতে লাগলেন। ভীমসেন আসছেন দেখে তাঁকে বাধা দেবার জন্য দুর্যোধন দশ হাজার গজসৈন্য পাঠালেন। ভীম সেই হস্তীর দল গদাঘাতে বিনষ্ট ক’রে রণস্থলে শংকরের ন্যায় নৃত্য করতে লাগলেন।

 সেনাপতি, জলসন্ধ, সুষেণ, বীরবাহু, ভীম, ভীমরথ, সুলোচন প্রভৃতি দুর্যোধনের চোদ্দ জন ভ্রাতা ভীমসেনকে আক্রমণ করলেন। পশুদলের মধ্যে ব্যাঘ্রের ম্যায় সৃক্কণী লেহন ক’রে ভীমসেন সেনাপতির শিরশ্ছেদন করলেন, জলসন্ধের হৃদয় বিদীর্ণ করলেন এবং সুষেণ বীরবাহু ভীম ভীমরথ ও সুলোচনকে যমালয়ে পাঠালেন। দুর্যোধনের অন্য ভ্রাতারা ভয়ে পালিয়ে গেলেন। তখন ভীষ্মের আদেশে ভগদত্ত এক বৃহৎ হস্তীতে চড়ে ভীমসেনকে দমন করতে এলেন। ভগদত্তের শরাঘাতে ভীম মূর্ছিত হয়ে রথের ধ্বজদণ্ড ধ’রে রইলেন। পিতা ভীমসেনের এই অবস্থা দেখে ঘটোৎকচ তখনই অন্তর্হিত হলেন এবং মায়াবলে ঘোর মূর্তি ধারণ করে ঐরাবত হস্তীতে আরূঢ় হয়ে দেখা দিলেন। তাঁর অনুচর রাক্ষসগণ অঞ্জন বামন ও মহাপদ্ম (পুণ্ডরীক) নামক দিগ্‌গজে চ’ড়ে উপস্থিত হ’ল। এইসকল চতুর্দন্ত দিগ্‌গজ চতুর্দিক থেকে ভগদত্তের হস্তীকে আক্রমণ করলে। ভগদত্তের হস্তী আর্তনাদ ক’রে পালাতে লাগল।

 ভীষ্ম দ্রোণ দুর্যোধন প্রভৃতি ভগদত্তকে রক্ষা করবার জন্য দ্রুতবেগে এলেন, যুধিষ্ঠিরাদিও তাঁদের পিছনে চললেন। সেই সময়ে ঘটোৎকচ অশনিগর্জনের ন্যায় সিংহনাদ করলেন। ভীষ্ম বললেন, দুরাত্মা হিড়িম্বাপুত্রের সঙ্গে এখন আমি যুদ্ধ করতে ইচ্ছা করি না, ও এখন বলবীর্য ও সহায় সম্পন্ন। আমাদের বাহনসকল শ্রান্ত হয়েছে, আমরা ক্ষতবিক্ষত হয়েছি, সূর্যও অস্তে যাচ্ছেন, অতএব এখন যুদ্ধের বিরাম হ’ক।