পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৪২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৯৪
মহাভারত

এবং তাঁর দেহে বিদ্ধ বাণসকল তুলে ফেলে তাঁকে আলিঙ্গন করে নিজের রথে উঠিয়ে নিলেন। দুর্যোধন ও তাঁর ভ্রাতারা ধৃষ্টদ্যুম্নকে আক্রমণ করলেন। ধৃষ্টদ্যুম্ন প্রমোহন অস্ত্র প্রয়োগ করলেন, তাতে দুর্যোধনাদি মূর্ছিত হয়ে পড়ে গেলেন। এই অবকাশে ভীমসেন বিশ্রাম ও জলপান ক’রে সুস্থ হলেন এবং ধৃষ্টদ্যুম্নের সহযোগে আবার যুদ্ধ করতে লাগলেন। দুর্যোধনাদির অবস্থা শুনে দ্রোণাচার্য সত্বর এলেন এবং প্রজ্ঞাস্ত্র দ্বারা প্রমোহন অস্ত্রের প্রভাব নষ্ট করলেন।

 যুধিষ্ঠিরের আদেশে অভিমন্যু, দ্রৌপদীর পুত্রগণ ও ধৃষ্টকেতু সসৈন্যে ভীম ও ধৃষ্টদ্যুম্নকে সাহায্য করতে এলেন এবং সূচীমুখ ব্যূহ রচনা করে কুরুসৈন্যমধ্যে প্রবেশ করলেন। তখন দ্রোণ ও দুর্যোধনাদির সঙ্গে ভীমসেন ও ধৃষ্টদ্যুম্নের প্রবল যুদ্ধ হচ্ছিল।

 অপরাহ্ন আগত হ’ল, ভাস্কর লোহিত বর্ণ ধারণ করলেন। ভীম দুর্যোধনকে বললেন, বহু বর্ষ যার কামনা করেছি সেই কাল এখন এসেছে, যদি যুদ্ধ থেকে নিবৃত্ত না হও তো আজ তোমাকে বধ করব, জননী কুন্তী ও দ্রৌপদীর সকল ক্লেশ এবং বনবাসের কষ্টের প্রতিশোধ নেব। আজ তোমাকে সবান্ধবে বধ ক’রে তোমার সমস্ত পাপের শান্তি করাব। ভীমের শরাঘাতে দুর্যোধনের ধনু ছিন্ন, সারথি আহত, এবং চার অশ্ব নিহত হ’ল। দুর্যোধন শরবিদ্ধ হয়ে মূর্ছিত হলেন, কৃপাচার্য তাঁকে নিজের রথে উঠিয়ে নিলেন।

 অভিমন্যু এবং দ্রৌপদীপুত্র শ্রুতকর্মা সুতসোম শ্রুতসেন ও শতানীকের শরাঘাতে দুর্যোধনের চার ভ্রাতা বিকর্ণ দুর্মুখ জয়ৎসেন ও দুষ্কর্ণ বিদ্ধ হয়ে ভূপতিত হলেন। সূর্যাস্তের পরেও কিছুক্ষণ যুদ্ধ চলল, তার পর অবহার ঘোষিত হ’লে কৌরব ও পাণ্ডবগণ নিজ নিজ শিবিরে ফিরে গেলেন।

১৩। বিরাটপুত্র শঙ্খের মৃত্যু ― ইরাবান ও নকুল-সহদেবের জয়

(সপ্তম দিনের যুদ্ধ)

 রক্তাক্তদেহে চিন্তাকুলমনে দুর্যোধন ভীষ্মের কাছে গিয়ে বললেন, পাণ্ডবরা আমাদের ব্যূহবদ্ধ বীর সৈন্যগণকে নিপীড়িত ক’রে হৃষ্ট হয়েছে। আমাদের মকর ব্যূহের ভিতরে এসে ভীম আমাকে পরাস্ত করেছে, তার ক্রোধ দেখে আমি মূর্ছিত হয়েছিলাম, এখনও আমি শান্তি পাচ্ছি না। সত্যসন্ধ পিতামহ, আপনার প্রসাদে যেন পাণ্ডবগণকে বধ ক’রে আমি জয়লাভ করতে পারি। ভীষ্ম হেসে বললেন, রাজপুত্র,