পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৪২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪০২
মহাভারত

কোন্ উপায়ে আমরা জয়ী হব, রাজ্যলাভ করব? প্রজারা কিসে রক্ষা পাবে? আপনার বধের উপায় বলুন। যুদ্ধে আপনার বিক্রম আমরা কি করে সইব? আপনার সূক্ষ্ম ছিদ্রও দেখা যায় না, কেবল মণ্ডলাকার ধনুই দেখতে পাই। আপনি রথে সূর্যের ন্যায় বিরাজ করেন; কখন বাণ নেন, কখন সন্ধান করেন, কখন জ্যাকর্ষণ করেন, কিছুই দেখতে পাই না। আপনার শরবর্ষণে আমাদের বিপুল সেনা ক্ষয় পাচ্ছে। পিতামহ, বলন কিরূপে আমরা জয়ী হব।

 ভীষ্ম বললেন, পাণ্ডবগণ, আমি জীবিত থাকতে তোমাদের জয়লাভ হবে না। যদি জয়ী হ’তে চাও তবে অনুমতি দিচ্ছি তোমরা শীঘ্র যথাসুখে আমাকে প্রহার কর। এই কার্যই তোমাদের কর্তব্য মনে করি, আমি হত হ’লে সকলেই হত হবে। যুধিষ্ঠির বললেন, আপনি দণ্ডধর ক্রুদ্ধ কৃতান্তের ন্যায় যুদ্ধ করেন, বজ্রধর ইন্দ্র এবং সমস্ত সুরাসুরও আপনাকে জয় করতে পারেন না, আমরা কি করে জয়ী হব তার উপায় বলুন। ভীষ্ম বললেন, পাণ্ডুপুত্র, তোমার কথা সত্য, সশস্ত্র হয়ে যুদ্ধ করলে আমি সুরাসুরেরও অজেয়। কিন্তু আমি যদি অস্ত্র ত্যাগ করি তবে তোমরা আমাকে বধ করতে পারবে। নিরস্ত্র, ভূপতিত, বর্ম ও ধ্বজ বিহীন, পলায়মান, ভীত, শরণাপন্ন, স্ত্রী, স্ত্রীনামধারী, বিকলেন্দ্রিয়, একপুত্রের পিতা, এবং নীচজাতির সঙ্গে যুদ্ধ করতে আমার প্রবৃত্তি হয় না। যার ধ্বজ অমঙ্গলসূচক তার সঙ্গেও যুদ্ধ করি না। তোমার সেনাদলে দ্রুপদপুত্র মহারথ শিখণ্ডী আছেন, তিনি পূর্বে স্ত্রী ছিলেন তা তোমরা জান। শিখণ্ডীকে সম্মুখে রেখে অর্জুন আমার প্রতি তীক্ষ্ণ শর নিক্ষেপ করুন। এই উপায়ে তোমরা ধার্তরাষ্ট্রগণকে জয় করতে পারবে।

 কুরুপিতামহ মহাত্মা ভীষ্মকে অভিবাদন ক’রে পাণ্ডবগণ নিজেদের শিবিরে ফিরে গেলেন। ভীষ্মকে প্রাণবিসর্জনে প্রস্তুত দেখে অর্জুন দুঃখিত ও লজ্জিত হয়ে বললেন, মাধব, কুরুবৃদ্ধ পিতামহের সঙ্গে কি ক’রে যদ্ধ করব? আমি বাল্যকালে গায়ে ধূলি মেখে তাঁর কাছে গিয়ে তাঁকেও ধূলিলিপ্ত করেছি, তাঁর কোলে উঠে পিতা ব’লে ডেকেছি[১]। তিনি বলতেন, বৎস, আমি তোমার পিতা নই, পিতার পিতা। সেই ভীষ্মকে কি ক’রে বধ করব? তিনি যেমন ইচ্ছা আমাদের সৈন্য ধ্বংস করুন, আমি তাঁর সঙ্গে যুদ্ধ করব না, তাতে আমার জয় বা মৃত্যু যাই হ’ক। কৃষ্ণ, তুমি কি বল?

  1. কিন্তু আদিপর্ব ২১-পরিচ্ছেদে আছে, পঞ্চ পাণ্ডব যখন হস্তিনাপুরে প্রথমে আসেন তখন অর্জনের বয়স চোদ্দ। তিনি শিশু নন।