পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৪৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দ্রোণপর্ব
৪২১

কোনও বিপদ হয় তবে ব্যূহ থেকে বেরিয়ে আসতে আমি পারব না। যুধিষ্ঠির বললেন, বৎস তুমি ব্যূহ ভেদ করে আমাদের জন্য দ্বার ক’রে দাও, আমরা তোমার সঙ্গে সঙ্গে প্রবেশ ক’রে তোমাকে রক্ষা করব। ভীম বললেন, বৎস, ধৃষ্টদ্যুম্ন সাত্যকি ও আমি তোমার অনুসরণ করব, পাঞ্চাল কেকয় মৎস্য প্রভৃতি যোদ্ধারাও যাবেন, তুমি একবার ব্যূহ ভেদ করলে আমরা বিপক্ষের প্রধান প্রধান যোদ্ধাদের বধ ক’রে ব্যূহ বিধ্বস্ত করব। অভিমন্যু বললেন, পতঙ্গ যেমন জ্বলিত অগ্নিতে প্রবেশ করে, আমি সেইরূপ দুর্ধর্ষ দ্রোণসৈন্যের মধ্যে প্রবেশ করব। সকলেই দেখতে পাবে, বালক হ’লেও আমি সংগ্রামে দলে দলে শত্রুসৈন্য ধ্বংস করব।

 যুধিষ্ঠির আশীর্বাদ করলেন। অভিমন্যু তাঁর সারথিকে বললেন, সুমিত্র, তুমি দ্রোণসৈন্যের দিকে শীঘ্র রথ নিয়ে চল। সারথি বললে, আয়ুষ্মান, পাণ্ডবগণ আপনার উপর গুরুভার দিয়েছেন, আপনি বিবেচনা করে যুদ্ধে প্রবৃত্ত হবেন। দ্রোণাচার্য অস্ত্রবিশারদ পরিশ্রমী কৃতী যোদ্ধা, আর আপনি সুখে পালিত, যুদ্ধেও অনভিজ্ঞ। অভিমন্যু সহাস্যে বললেন, সারথি, দ্রোণ ও সমগ্র ক্ষত্রমণ্ডলকে আমি ভয় করি না, ঐরাবতে আরূঢ় ইন্দ্রের সঙ্গেও আমি যুদ্ধ করতে পারি। বিশ্বজয়ী মাতুল কৃষ্ণ বা পিতা অর্জুন যদি আমার সঙ্গে যুদ্ধ করতে আসেন তথাপি আমি ভয় পাব না। তুমি বিলম্ব ক’রো না, অগ্রসর হও। তখন সারথি সুমিত্র অপ্রসন্নমনে রথের অশ্বদের দ্রুতবেগে চালনা করলে, পাণ্ডবগণ পিছনে চললেন। সিংহশিশু যেমন হস্তিদলের প্রতি ধাবিত হয়, অভিমন্যু সেইরূপ দ্রোণ প্রভৃতি মহারথগণের প্রতি ধাবিত হলেন। তিনি অল্প দূরে গেলেই দুই পক্ষের যুদ্ধ আরম্ভ হ’ল।

 দ্রোণের সমক্ষেই অভিমন্যু ব্যূহ ভেদ করে ভিতরে গেলেন এবং কুরুসৈন্য ধ্বংস করতে লাগলেন। দুর্যোধন অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হয়ে অভিমন্যুকে বাধা দিতে এলেন। দ্রোণ অশ্বত্থামা কৃপ কর্ণ শল্য প্রভৃতি শরবর্ষণ ক’রে অভিমন্যুকে আচ্ছন্ন করলেন। অভিমন্যুর শরাঘাতে শল্য মূর্ছিত হয়ে রথের উপর ব’সে পড়লেন, কৌরবসৈন্য পালাতে লাগল। শল্যের ভ্রাতা অভিমন্যুর সঙ্গে যুদ্ধ করতে এসে নিহত হলেন।

 দ্রোণ হৃষ্ট হয়ে উৎফুল্লনয়নে কৃপকে বললেন, এই সুভদ্রানন্দন অভিমন্যু আজ যুধিষ্ঠিরাদিকে আনন্দিত করবে। এর তুল্য ধনুর্ধর আর কেউ আছে এমন মনে হয় না, এ ইচ্ছা করলেই আমাদের সেনা সংহার করতে পারে, কিন্তু কোনও কারণে তা করছে না। দ্রোণের এই কথায় দুর্যোধন বিস্মিত ও ক্রুদ্ধ হয়ে কর্ণ