পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৫১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কর্ণপর্ব
৪৮৩

করত। একদিন গরুড়ের ন্যায় দ্রুতগামী এবং চক্রবাকের ন্যায় বিচিত্রদেহ কতকগুলি হংস বেগে উড়ে এসে সমুদ্রের তীরে নামল। বৈশ্যপুত্রেরা কাককে বললে, বিহঙ্গম, তুমি ওই হংসদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। তখন সেই উচ্ছিষ্টভোজী কাক সগর্বে হংসদের কাছে গিয়ে বললে, চল, আমরা উড়ব। হংসেরা বললে, আমরা মানস সরোবরে থাকি, ইচ্ছানুসারে সর্বত্র বিচরণ করি, বহুদূর যেতে পারি, সেজন্য পক্ষীদের মধ্যে আমরা বিখ্যাত। দুর্মতি, তুমি কাক হয়ে কি ক’রে আমাদের সঙ্গে উড়বে?

 কাক বললে, আমি এক শ এক প্রকার ওড়বার পদ্ধতি জানি এবং প্রত্যেক পদ্ধতিতে বিচিত্র গতিতে শত যোজন যেতে পারি। আজ আমি উড্ডীন অবডীন প্রডীন ডীন নিডীন সংডীন তির্যগ্‌ডীন পরিডীন প্রভৃতি বহুপ্রকার গতিতে উড়ব, তোমরা আমার শক্তি দেখতে পাবে। বল, এখন কোন গতিতে আমি উড়ব, তোমরাও আমার সঙ্গে উড়ে চল। একটি হংস হাস্য ক’রে বললে, সকল পক্ষী যে গতিতে ওড়ে আমি সেই গতিতেই উড়ব, অন্য গতি জানি না। রক্তচক্ষু কাক, তোমার যেমন ইচ্ছা সেই গতিতে উড়ে চল।

 হংস ও কাক পরস্পর প্রতিদ্বন্দ্বিতা ক’রে উড়তে লাগল, হংস একই গতি এবং কাক বহুপ্রকার গতি দেখাতে দেখাতে চলল। হংস নীরব রইল, দর্শকদের বিস্মিত করবার জন্য কাক নিজের গতির বর্ণনা করতে লাগল। অন্যান্য কাকেরা হংসদের নিন্দা করতে করতে একবার বৃক্ষের উপর উড়ে বসল, আবার নীচে নেমে এল। হংস মৃদু গতিতে উড়ে কিছুকাল কাকের পিছনে রইল, তার পর দর্শক কাকদের উপহাস শুনে বেগে সমুদ্রের উপর দিয়ে পশ্চিম দিকে উড়ে চলল। কাক শ্রান্ত ও ভীত হয়ে ভাবতে লাগল, কোথাও দ্বীপ বা বৃক্ষ নেই, আমি কোথায় নামব? হংস পিছনে ফিরে দেখলে, কাক জলে পড়ছে। তখন সে বললে, কাক, তুমি বহুপ্রকার গতির বর্ণনা করেছিলে, কিন্তু এই গুহ্য গতির কথা তো বল নি! তুমি পক্ষ ও চক্ষু দিয়ে বার বার জলস্পর্শ করছ, এই গতির নাম কি?

 পরিশ্রান্ত কাক জলে পড়তে পড়তে বললে, হংস, আমরা কাক রূপে সৃষ্ট হয়েছি, কা কা রব করে বিচরণ করি। প্রাণরক্ষার জন্য আমি তোমার শরণ নিলাম, আমাকে সমুদ্রের তীরে নিয়ে চল। প্রভু, আমাকে বিপদ থেকে উদ্ধার কর, যদি ভালয় ভালয় নিজের দেশে ফিরতে পারি তবে আর কাকেও অবজ্ঞা করব না। কাকের এই বিলাপ শুনে হংস কিছু না ব’লে তাকে পা দিয়ে উঠিয়ে পিঠে তুলে নিলে এবং দ্রুতবেগে উড়ে তাকে সমুদ্রতীরে রেখে অভীষ্ট দেশে চ’লে গেল।

 উপাখ্যান শেষ ক’রে শল্য বললেন, কর্ণ, তুমি সেই উচ্ছিষ্টভোজী কাকের