পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৫১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৮৬
মহাভারত

লাগলেন। চৌত্রিশ হাজার সংশপ্তকের সঙ্গে ধৃতরাষ্ট্রপুত্রগণ ব্যূহের বামে রইলেন এবং তাঁদের পার্শ্বে কাম্বোজ শক ও যবন যোদ্ধারা অবস্থান করলেন। ব্যূহের মধ্য দেশে কর্ণ এবং পশ্চাতে দুঃশাসন রইলেন।

 পুরাকালে বেদমন্ত্রে উদ্দীপিত অগ্নি যে রথের অশ্ব হয়েছিলেন, যে রথ ব্রহ্মা ঈশান ইন্দ্র ও বরুণকে পর পর বহন করেছিল, সেই আদিম আশ্চর্য রথে কৃষ্ণার্জুন আসছেন দেখে শল্য বললেন, কর্ণ, শ্বেত অশ্ব যার বাহন এবং কৃষ্ণ যার সারথি সেই রথ আসছে। তুমি যাঁর অনুসন্ধান করছিলে, কর্মবিপাকের ন্যায় দুর্নিবার সেই অর্জুন শত্রুবধ করতে করতে অগ্রসর হচ্ছেন। দেখ, নানাপ্রকার দুর্লক্ষণ দেখা যাচ্ছে, একটা ঘোরদর্শন মেঘতুল্য কবন্ধ সূর্যমণ্ডল আবৃত করে রয়েছে, বহু সহস্র কঙ্ক ও গৃধ্র সমবেত হয়ে ঘোর রব করছে। অর্জুনের গাণ্ডীব আকৃষ্ট হয়ে কূজন করছে, তাঁর হস্তনিক্ষিপ্ত তীক্ষ্ণ শরজাল শত্রু বিনাশ করছে। নিহত রাজাদের মুণ্ডে রণভূমি আবৃত হয়েছে, আরোহীর সহিত অশ্বগণ মুমূর্ষু হয়ে ভূমিতে শুয়ে পড়ছে, নিহত হস্তীরা পর্বতের ন্যায় পতিত হচ্ছে। রাধেয় কর্ণ, কৃষ্ণ যাঁর সারথি এবং গাণ্ডীব যাঁর ধনু, সেই অর্জুনকে যদি বধ করতে পার তবে তুমিই আমাদের রাজা হবে।

 এই সময়ে সংশপ্তকগণের আহ্বানে অর্জুন তাদের সঙ্গে যুদ্ধে রত হলেন। কর্ণ বললেন, শল্য, দেখুন, মেঘ যেমন সূর্যকে আবৃত করে, সংশপ্তকগণ সেইরূপ অর্জুনকে ঘিরে অদৃশ্য ক’রে ফেলেছে। অর্জুন যোদ্ধৃসাগরে নিমগ্ন হয়েছে, এই তার শেষ। শল্য বললেন, জল দ্বারা কে বরুণকে বধ করতে পারে? কাষ্ঠ দ্বারা কে অগ্নি নির্বাপন করতে পারে? কোন লোক বায়ুকে ধ’রে রাখতে বা মহার্ণব পান করতে পারে? যুদ্ধে অর্জুনের নিগ্রহ আমি সেইরূপই অসম্ভব মনে করি। তবে কথা ব’লে যদি তোমার পরিতোষ হয় তবে তাই বল।

 কর্ণ ও শল্য এইরূপ আলাপ করছিলেন এমন সময়ে দুই পক্ষের সেনা গঙ্গাযমুনার ন্যায় মিলিত হ’ল। রুদ্র যেমন পশু সংহার করেন অর্জুন সেইরূপ তাঁর চতুর্দিকের শত্রু বধ করতে লাগলেন। কর্ণের শরাঘাতে বহু পাঞ্চালবীর নিহত হলেন, তাঁদের সৈন্যমধ্যে হাহাকার উঠল। পাণ্ডববাহিনী ভেদ ক’রে কর্ণ বহু রথ হস্তী অশ্ব ও পদাতি নিয়ে যুধিষ্ঠিরের নিকটে এলেন। শিখণ্ডী ও সাত্যকির সহিত পাণ্ডবগণ যুধিষ্ঠিরকে বেষ্টন করলেন। সাত্যকি কর্তৃক প্রেরিত হয়ে দ্রবিড় অন্ধ্র ও নিষাদ দেশীয় পদাতি সৈন্যরা কর্ণকে মারবার জন্য সবেগে এল, কিন্তু শরাহত হয়ে ছিন্ন শালবনের ন্যায় ভূপতিত হ’ল। পাণ্ডব, পাঞ্চাল ও