পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৬২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শান্তিপর্ব
৫৯৩

— কোনও প্রাণীর হিংসা করবে না, সকলের প্রতি মিত্রতুল্য আচরণ করবে; এই মানবজন্ম পেয়ে কারও সঙ্গে শত্রুতা করবে না। যদি কেউ মরে, বা কোনও বস্তু নষ্ট হয়, তবে সেই অতীত বিষয়ের জন্য যে শোক করে সে দুঃখ হ’তেই দুঃখ পেয়ে দ্বিগুণ অনর্থ ভোগ করে। চিন্তা না করাই দুঃখনিবারণের ঔষধ; চিন্তা করলে দুঃখ কমে না, আরও বেড়ে যায়।—

ব্যাধিভিমর্থ্যমানাং ত্যজতাং বিপুলং ধনম।
বেদনাং নাপকর্ষন্তি যতমানাশ্চিকিৎসকাঃ॥
তে চাতিনিপণা বৈদ্যাঃ কুশলাঃ সম্ভৃতৌষধাঃ।
ব্যাধিভিঃ পরিকৃষ্যন্তে মৃগা ব্যাধৈরিবাদির্তাঃ॥
কে বা ভুবি চিকিৎসন্তে রোগার্তান্ মৃগপক্ষিণঃ।
শ্বাপদানি দরিদ্রাংশ্চ প্রায়ো নার্তা ভবন্তি তে॥
ঘোরানপি দুরাধর্ষান, নৃপতীনুগ্রতেজসঃ।
আক্রম্যাদদতে রোগাঃ পশূন্ পশুগণা ইব॥

— ব্যাধিতে ক্লিষ্ট হয়ে যাদের বিপুল ধন ত্যাগ করতে হয়, চিকিৎসকগণ যত্ন ক’রেও তাদের মনোবেদনা দূর করতে পারেন না। অতিনিপুণ অভিজ্ঞ বৈদ্যগণ, যাঁরা ঔষধ সঞ্চয় ক’রে রাখেন, ব্যাধ কর্তৃক নিপীড়িত মৃগের ন্যায় তাঁরাও ব্যাধি দ্বারা আক্রান্ত হন। পৃথিবীতে রোগার্ত মৃগ পক্ষী শ্বাপদ ও দরিদ্র লোককে কে চিকিৎসা করে? এরা প্রায়ই পীড়িত হয় না। পশু যেমন প্রবলতর পশু কর্তৃক আক্রান্ত হয়, অতি দুর্ধর্ষ উগ্রতেজা নৃপতিও সেইরূপ রোগের কবলে পড়েন।

 দেবর্ষি নারদ শুকদেবকে এইপ্রকার অনেক উপদেশ দিলেন। শুকদেব ভাবলেন, স্ত্রীপুত্রাদি পালনে বহু ক্লেশ, বিদ্যার্জনেও বহু শ্রম; অল্প আয়াসে কি ক’রে আমি শাশ্বত স্থান লাভ করব যেখান থেকে আর সংসারে ফিরে আসতে হবে না? শুকদেব স্থির করলেন, তিনি যোগবলে দেহ ত্যাগ ক’রে সূর্যমণ্ডলে প্রবেশ করবেন। তিনি নারদের অনুমতি নিয়ে ব্যাসদেবের কাছে গেলেন। ব্যাস বললেন, পুত্র, তুমি কিছুক্ষণ এখানে থাক, তোমাকে দেখে আমার চক্ষু তৃপ্ত হ’ক। শুকদেব উদাসীন স্নেহশূন্য ও সংশয়মুক্ত হয়ে পিতাকে ত্যাগ ক’রে কৈলাস পর্বতের উপরে চ’লে গেলেন। সেখান থেকে তিনি যোগাবলম্বন ক’রে আকাশে উঠে সূর্যের অভিমুখে যাত্রা করলেন এবং বায়ুমণ্ডলের ঊর্ধ্বে গিয়ে ব্রহ্মত্ব লাভ করলেন।

 ব্যাসদেব স্নেহবশত পুত্রের অনুগমন করলেন এবং সরোদনে উচ্চস্বরে শুক ব’লে ডাকতে লাগলেন। সর্বব্যাপী সর্বাত্মা সর্বতোমুখ শুক স্থাবরজঙ্গম অনুনাদিত