পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৬
মহাভারত

 শকুন্তলা বললেন, আপনি একটু অপেক্ষা করুন, আমার পিতা ফিরে এলেই আপনার হাতে আমাকে সম্প্রদান করবেন। তিনিই আমার প্রভু ও পরম দেবতা, তাঁকে অমাননা ক’রে অধর্মানুসারে পতিবরণ করতে পারি না। দুষ্মন্ত বললেন, বরবর্ণিনী, ধর্মানসারে তুমি নিজেই নিজেকে দান করতে পার। ক্ষত্রিয়ের পক্ষে গান্ধর্ব বা রাক্ষস বিবাহ অথবা এই দুইএর মিশ্রিত রীতিতে বিবাহ ধর্মসংগত, অতএব তুমি গান্ধর্ব বিধানে আমার ভার্যা হও। শকুন্তলা বললেন, তাই যদি ধর্ম সংগত হয় তবে আগে এই অঙ্গীকার করুন যে আমার পুত্র যুবরাজ হবে এবং আপনার পরে সেই পুত্রই রাজা হবে।

 কিছুমাত্র বিচার না ক’রে দুষ্মন্ত উত্তর দিলেন, তুমি যা বললে তাই হবে। মনস্কামনা সিদ্ধ হ’লে তিনি শকুন্তলাকে বার বাব বললেন, সুহাসিনী, আমি চতুরঙ্গিণী সেনা পাঠাব, তারা তোমাকে আমার রাজধানীতে নিয়ে যাবে। এইরূপ প্রতিশ্রুতি দিয়ে এবং কণ্ব শুনে কি বলবেন তা ভাবতে ভাবতে দুষ্মন্ত নিজের পুরীতে ফিরে গেলেন।

 কণ্ব আশ্রমে ফিরে এলে শকুন্তলা লজ্জায় তাঁর কাছে গেলেন না, কিন্তু মহর্ষি দিব্যদৃষ্টিতে সমস্ত জেনে প্রীত হয়ে বললেন, ভদ্রে, তুমি আমার অনুমতি না নিয়ে আজ যে পুরুষসংসর্গ করেছ তাতে তোমার ধর্মের হানি হয় নি। নির্জনে বিনা মন্ত্রপাঠে সকাম পুরুষের সকামা স্ত্রীর সঙ্গে যে মিলন তাকেই গান্ধর্ব বিবাহ বলে, ক্ষত্রিয়ের পক্ষে তাই শ্রেষ্ঠ। শকুন্তলা, তোমার পতি দুষ্মন্ত ধর্মাত্মা এবং পুরুষশ্রেষ্ঠ, তোমার যে পুত্র হবে সে সাগরবেষ্টিতা সমগ্র পৃথিবী ভোগ করবে। শকুন্তলা কণ্বের আনীত ফলাদির বোঝা নামিয়ে রেখে তাঁর পা ধুইয়ে দিলেন এবং তাঁর শ্রান্তি দূর হ’লে বললেন, আমি স্বেচ্ছায় দুষ্মন্তকে পতিত্বে বরণ করেছি, আপনি মন্ত্রিসহ সেই রাজার প্রতি অনুগ্রহ করুন। শকুন্তলার প্রার্থনা অনুসারে কণ্ব বর দিলেন, পুরুবংশীয়গণ ধর্মিষ্ঠ হবে, কখনও রাজ্যচ্যুত হবে না।

 তিন বৎসর পরে[১] শকুন্তলা একটি সুন্দর মহাবলশালী অগ্নিতুল্য দ্যুতিমান পুত্র প্রসব করলেন। এই পুত্র কণ্বের আশ্রমে পালিত হতে লাগল এবং ছ বৎসর বয়সেই সিংহ ব্যাঘ্র বরাহ মহিষ হস্তী প্রভৃতি ধরে এনে আশ্রমস্থ বৃক্ষে বেঁধে রাখত। সকল জন্তুকেই সে দমন করত সেজন্য আশ্রমবাসীরা তার নাম দিলেন সর্বদমন। তার অসাধারণ বলবিক্রম দেখে কণ্ব বললেন, এর যুবরাজ হবার সময়

  1. টীকাকার বলেন, মহাপুরুষগণ দীর্ঘকাল গর্ভে বাস করেন।