পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৬৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬০৬
মহাভারত

কালে নেই; কৌমারে পিতা, যৌবনে পতি এবং বার্ধক্যে পুত্র তাকে রক্ষা করে। বদ্ধা বললেন, আমি কন্যা, ব্রহ্মচর্য পালন করি, আমাকে বিবাহ কর, প্রত্যাখ্যান ক’রো না।

 সহসা বৃদ্ধার রূপান্তর হ’ল, তিনি সর্বাভরণভূষিতা পরমরূপবতী কন্যার আকৃতি ধারণ করলেন। অষ্টাবক্র আশ্চর্য হয়ে ভাবলেন, মহর্ষি বদান্য আমাকে পরীক্ষার জন্য এখানে পাঠিয়েছেন; তাঁর দুহিতাকে ত্যাগ ক’রে কি এই পরমসুন্দরী কন্যাকেই গ্রহণ করব? আমার কামদমনের শক্তি ও ধৈর্য আছে, আমি সত্য থেকে চ্যুত হব না। তিনি সেই কন্যাকে বললেন, তুমি কিজন্য নিজের রূপ পরিবর্তন করলে সত্য বল। কন্যা বললেন, সত্যবিক্রম ব্রাহ্মণ, আমি উত্তর দিকের অধিষ্ঠাত্রী দেবী, মহর্ষি বদান্যের অনুরোধে তোমাকে পরীক্ষা করছিলাম, তুমি উত্তীর্ণ হয়েছ। জেনে রাখ যে স্ত্রীজাতি চপলা, স্থবিরা স্ত্রীরও কামজ্বর হয়। দেবতারা তোমার উপর প্রসন্ন হয়েছেন, তুমি নির্বিঘ্নে গৃহে ফিরে যাও এবং বাঞ্ছিতা কন্যাকে বিবাহ ক’রে পুত্রলাভ কর।

 তার পর অষ্টাবক্র বদান্যের কাছে এসে সমস্ত বৃত্তান্ত জানালেন, বদান্য তুষ্ট হয়ে তাঁর কন্যাকে দান করলেন। অষ্টাবক্র শুভনক্ষত্রযোগে সুপ্রভাকে বিবাহ ক’রে নিজ আশ্রমে সুখে বাস করতে লাগলেন।[১]

৬। ব্রহ্মহত্যাতুল্য পাপ— গঙ্গামাহাত্ম্য—মতঙ্গ

 যুধিষ্ঠির বললেন, পিতামহ, ব্রহ্মহত্যা না করলেও কোন কর্মে ব্রহ্মহত্যার পাপ হয়? ভীষ্ম বললেন, ব্যাসদেবের কাছে আমি যা শুনেছি তাই বলছি।—যে লোক ভিক্ষা দেব ব’লে ব্রাহ্মণকে ডেকে এনে প্রত্যাখ্যান করে, যে দুর্বদ্ধি বেদাধ্যায়ী ব্রাহ্মণের বৃত্তি হরণ করে, পিপাসার্ত গোসমূহের জলপানে যে বাধা দেয়, শ্রুতি বা মুনিপ্রণীত শাস্ত্র যে অনভিজ্ঞতার জন্য দূষিত করে, রূপবতী দুহিতাকে যে উপযুক্ত পাত্রে সম্প্রদান না করে, দ্বিজাতিকে যে অধার্মিক মূঢ় অকারণে মর্মান্তিক দুঃখ দেয়, যে লোক চক্ষুহীন পঙ্গু বা জড়ের সর্বস্ব হরণ ক’রে, যে মূঢ়

  1. যুধিষ্ঠিরের প্রশ্নের সঙ্গে এই উপাখ্যানের কি সম্বন্ধ তা স্পষ্ট নয়। বোধ হয় প্রতিপাদ্য এই, যে প্রজাপতিবিহিত সন্তানোৎপাদনের জন্যই সহধর্মিণীর প্রয়োজন।