পাতা:মহিষাসুরমর্দ্দিনী (১৯৬২).mp3/১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
[০০:১৫:৩০ (পুরুষ কণ্ঠে স্তোত্রপাঠ)]

দেবী চণ্ডিকা সচেতন চিন্ময়ী
তিনি চিন্মাত্ররূপে কৃষ্ণজগত ঘিরে করেন অবস্থান
লোকের অভ্যুদয়কালে বিশ্ব প্রসদিত্রী বিশ্বমোহিনী মহাদেবী লক্ষ্মীবৃদ্ধিপ্রদা
দেবী দিব্যজ্ঞান ইচ্ছা ও ক্রিয়ার প্রত্যক্ষমূর্তি
তিনি সর্বচৈতন্যময়ী
দেবমানবকে বহুবাঞ্ছিত আত্মতত্ত্ব দানে করেন ধন্য
আজ মহামহোৎসবে শুচিরপ্রার্থিকা বিদ্যা বিজ্ঞান শ্রী সম্পদ শক্তি সিদ্ধি সংযোজিনী
ত্রিলোকেশ্বরী মূর্তিতে এই বীরাবির্ভাবে শ্যামলা ধরিত্রী হোক নন্দিতা

ব্রাহ্মমুহূর্তে যখন মহামুনি সুমেধা মহাশক্তি দুর্গাকে আবাহন করছেন তখন হৃতসর্বস্ব রাজা সুরথ ও নিগৃহীত বৈশ্য সমাধি মিলিত হয়ে ব্রহ্মর্ষির আশ্রমে এলেন। সুরথ মহামুনির কাছে আপনার সকল দুঃখ বেদনা নিবেদন করলেন আর বললেন ধনলোভের কারণে পুত্র কলত্রাদি কর্তৃক বিতাড়িত তথাপি মায়া দুর্বলচিত্ত বৈশ্যের করুণকাহিনী। ঋষি বললেন, “মহাশক্তির আরাধনা কর। তিনি এই নিখিল চরাচর সৃষ্টি করেছেন। সেই মহাদেবীকে প্রসন্ন কর। তিনি সকল কামনা পূর্ণ করবেন, দুঃখের শান্তি এনে দেবেন।” তখন রাজা সুরথ প্রশ্ন করলেন, “ভগবন্‌, আপনি যে মহামায়া মহাশক্তির কথা বলছেন, তিনি কে? তাঁর সৃষ্টি কোথায়? তাঁর কর্ম, তাঁর প্রভাব, তাঁর স্বরূপ কি প্রকার?” সুমেধা বললেন, “মহারাজ, তিনি নিত্যা, তাঁর আদি নেই, অন্ত নেই, তাঁর প্রাকৃত মূর্তি নেই, এই বিশ্বের প্রকাশ কারণ তিনি, এতেই তিনি মিলিয়ে আছেন। নিত্যা হয়েও অসুরপীড়িত দেবতাদের রক্ষা করবার জন্য তাঁর আবির্ভাব হয়। সেই বার্তা তোমায় জ্ঞাপন করি। পুর্বকল্প অবসানের পর প্রলয়কালে সমস্ত জগত কেবল কারণসলিলে পরিণত হল। ভগবান বিষ্ণু অখিলশক্তীয়রভাব সংগৃহীত করে সেই কারণ সমুদ্রে রচিত অনন্ত শয্যাপরে যোগনিদ্রায় অভিভূত হলেন। বিষ্ণুর যোগনিদ্রার অবসানকালে তাঁর নাভিপদ্ম থেকে জেগে উঠলেন ভাবীকল্পের সৃষ্টিবিধাতা ব্রহ্মা। কিন্তু বিষ্ণুর কর্ণমলজাত মধু কৈটভ অসুরদ্বয় ব্রহ্মার কর্ম অস্তিত্ব বিনাশে উদ্যত হতেই পদ্মযোনি ব্রহ্মা যোগনিদ্রায় মগ্ন সর্বশক্তিমান বিশ্বপাতা বিষ্ণুকে জাগরিত করবার জন্য জগতের স্থিতি সংহারকারিণী বিশ্বেশ্বরী জগজ্জননী হরিনেত্রনিবাসিনী নিরূপমা ভগবতীকে স্তব মন্ত্রে উদ্বোধিত করলেন।

ত্বং স্বাহা ত্বং স্বধা ত্বং হি বষ্‌টকারঃ স্বরাত্মিকা।
সুধা ত্বং অক্ষরে নিত্যে তৃধা মাত্রাত্মিকা স্থিতা॥
অর্ধমাত্রা স্থিতা নিত্যা যা অনুচ্চারিয়াবিশেষতঃ।
ত্বমেব সন্ধ্যা সাবিত্রী ত্বং দেবী জননী পরা॥
ত্বয়েতদ্ধার্যতে বিশ্বং ত্বয়েতৎ সৃজ্যতে জগৎ।
ত্বয়েতৎ পাল্যতে দেবী ত্বমৎস্যন্তে চ সর্বদা॥
বিসৃষ্টৌ সৃষ্টিরূপা ত্বং স্থিতিরূপা চ পালনে।
তথা সংহৃতিরূপান্তে জগতোস্য জগন্ময়ে॥
মহাবিদ্যা মহামায়া মহামেধা মহাস্মৃতিঃ।
মহামোহা চ ভবতি মহাদেবী মহাসুরী॥
প্রকৃতিস্ত্বং চ সর্বস্ব গুণাত্রয়বিভাবিনী।
কালরাত্রির্মহারাত্রির্মোহারাত্রিশ্চ দারূণা॥
ত্বং শ্রীস্তমীশ্বরী ত্বং হৃস্ত্বং বুদ্ধির্বোধলক্ষণা।
লজ্জা পুষ্টিস্তথা তুষ্টিস্ত্বং শান্তিঃ ক্ষান্তিরেব চ॥
খড়্গিনী শূলিনী ঘোরা গদিনী চক্রিনী তথা।
শঙ্খিনী চাপিনী বাণ ভূশূণ্ডী পরিঘায়ূধা॥
সৌম্যা সৌম্যতরাঽশেষ সৌম্যেভ্যস ত্বতিসুন্দরী।
পরাপরাণাং পরমা ত্বমেব পরমেশ্বরী॥

তখন বিষ্ণুর যোগনিদ্রা ভঙ্গ হল। বিষ্ণুর অঙ্গপ্রত্যঙ্গ থেকে বাহির হলেন প্রলয়ান্ধকাররূপিনী তামসী দেবী। বিষ্ণুর সুদর্শন চক্রচালনে মধু কৈটভের মস্তক ছিন্ন করলেন। পুনরায় ব্রহ্মা ধ্যানমগ্ন হলেন।

এদিকে দুর্ধর্ষ দৈত্যরাজ মহিষাসুরের পরাক্রমে দেবতারা স্বর্গের অধিকার হারালেন। অসুরপতির অত্যাচারে দেবলোক বিষাদব্যথায় পরিম্লান হয়ে গেল। স্বর্গভ্রষ্ট অমরকুলের এই দুর্বিষহ অত্যাচার কাহিনী শুনে শান্ত যোগীবর মহাদেবের সুগৌর মুখমণ্ডল ক্রোধে রক্তজবার মত রাঙা বরণ ধারণ করলে আর শঙ্খচক্রগদাপদ্মধারী নারায়ণের আনন ভ্রুকুটিকুটিল হয়ে উঠল। বিশ্বযোনি বিষ্ণু ও রুদ্রের বদন থেকে তেজজ্যোতি বিচ্ছুরিত হল। ব্রহ্মা ও দেবগণের আনন থেকে তেজ নির্গত হল। এই পর্বতপ্রমাণ জ্যোতিপুঞ্জ প্রজ্জ্বলিত হুতাশনের ন্যায় দেদীপ্যমান কিরণে দিঙ্‌মণ্ডল পূর্ণ করে দিলে। ঐ তেজরশ্মি একত্র হয়ে পরমা রূপবতী দিব্যশ্রীমূর্তি উৎপন্ন হল। ইনি জগন্মাতৃকা মহামায়া। তিনিই দেবী, তিনিই বাক্‌। তাই তাঁর স্তুতিগাথা সর্বলোকে অভিমন্দ্রিত হল।”