পাতা:মাইকেল মধুসূদন দত্তের জীবন-চরিত - যোগীন্দ্রনাথ বসু.pdf/৬৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

wry জীবন চরিত । প্ৰদৰ্শিত হইয়াছে। ভারত-কবির মাধুৰ্য্য ও কোমলতার সঙ্গে পাশ্চাত্যা কবিগণের ওজস্বিতার সম্মিলন করিয়া তিনি বাঙ্গালা পদ্যকে সমুন্নত করিায়াছেন। ইতালীরাজ ভিকৃতির ইমানুয়েল মধুসূদনের প্রতিভা সম্বন্ধে যাহা বলিয়াছিলেন, তাহা স্বরূপ-কথনই হইয়াছে ; তাহার কবিতা, প্ৰকৃতই, গ্ৰন্থিরূপে প্ৰাচ্য ও প্রতীচাকে সংযুক্ত করিয়াছে। মধুসূদনের গ্ৰন্থ বিজাতীয় ভাবের প্রাবল্যের জন্য আমাদিগের ক্লেশ হয় ; কিন্তু তিনি পথপ্ৰদৰ্শক ; নূতন পথে পথ-প্ৰদৰ্শককে প্রায়ই স্থলিতপদ হইতে হয়। মধুসূদনের অনুবৰ্ত্তিগণ, সাবধানতার সহিত, তাহার পদাঙ্কের অনুসরণ করিলে, জাতীয়ভাব বিসর্জন না করিয়া, বাঙ্গালা সাহিত্যকে আরও সমুন্নত করিতে পরিবেন। বাঙ্গালাকাব্য ও কবিতাসম্বন্ধে মধুসূদনের তৃতীয় কাৰ্য্য সাধারণের রুচি-পরিবর্তন । এখন যে আর বিদ্যাসুন্দরের ন্যায় কাব্য শিক্ষিত সমাজে প্ৰতিষ্ঠালাভ করিবে, সে সম্ভাবনা নাই । মেঘনাদবধ যে - আদর্শ সংস্থাপিত করিয়াছে, তাহা এখন বহুদিন পৰ্যন্ত বাঙ্গালা সাহিত্যের প্রবণতা নিয়ন্ত্রিত করিবে । ইংরাজী সাহিত্যই যে এই রুচিপরিাবৰ্ত্তনের মূল, তাহাতে সন্দেহ নাই ; কিন্তু মধুসূদনের কাৰ্যও উপেক্ষণীয় নহে । তিনি এতগুলি গ্ৰন্থ রচনা করিয়া গিয়াছেন, কিন্তু বীরাঙ্গনার তারা-পত্রিকা ভিন্ন আর কোন স্থলেই অসৎ আদর্শের বা অসৎ নীতির সমৰ্থন করেন নাই। যে লঘুচিত্ততা অধিকাংশ বাঙ্গালি লেখকের রচনায় পরিব্যক্ত, মধুসূদনের রচনায়, কুত্ৰাপি, তাহা লক্ষিত হইবে না । মধুসূদনের দােষ উল্লেখ করিতে আমরা কোন স্থলেই কুষ্ঠিত হই নাই । কিন্তু সেই সকল দোষ সত্ত্বেও আমরা স্বীকার করিতে বাধ্য যে, তাহার ন্যায় প্ৰতিভাবান কবি এ পর্যন্ত বাঙ্গালা দেশে কেহ জন্মগ্রহণ করেন নাই । পদাবলীর লালিত্যে এবং পরকীয় নায়ক, নায়িকার চিত্তবৃত্তি বর্ণনে মধুসূদনের প্রতিভার বিশেষত্ব ।