পাতা:মাঝির ছেলে - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৯
মাঝির ছেলে

 নকুল মাঝি একপাশে চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিল, তাকে কাছে ডেকে যাদববাবু বললেন, 'তর নাকি বেজী আছে নকুইলা? যা দেখি, নিয়া আয় গিয়া।'

 নকুল ধীরে ধীরে বলল, 'মাইয়া কি দিবো কর্তা?'

 যাদববাবু হেসে বললেন, ‘দিবো দিবো, কইস্‌ আমি চাইছি। ভাল দেইখা একখান শাড়ী কিনা দিস মাইয়ারে।' দু’টি টাকা এনে যাদববাবু নকুলের হাতে দিলেন।

 আধ ঘণ্টা পরে নকুল কাঠের বাক্সসুদ্ধ রাম লক্ষ্মণকে এনে দাওয়ায় নামিয়ে রাখল। কণিকা উচ্ছ্বসিত হয়ে বলল, 'আমার বেজী, আমার টুষি-পুষি!'

 হাত বদল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রামলক্ষ্মণের নাম পর্যন্ত বদলে হয়ে গেল টুষি-পুষি

 এদিকে নাগা ভাবছিল, আহা, মেয়েটা অমন করে কাঁদছে, ফাঁদটা না ভাঙ্গলেই হ’ত। নাগা বুঝতে পারছিল, কণিকা নিজে থেকে যাদববাবুকে জুয়াচোর বলে নি, মাধববাবুকে যা বলতে শুনেছিল তাই সে মুখস্থ বলেছে মাত্র। ছেলেমানুষ তো, ওর কি আর বুদ্ধি বলে কিছু আছে!

 অন্ধকার গাঢ় হবার আগেই নাগা তাই ভাঙ্গা বেজী-ধরা ফাঁদটা মেরামত করার জন্য বাঁশবনে চলে গিয়েছিল। মেরামত শেষ করতে সন্ধ্যা হয়ে গেল, কিন্তু তাতে বিশেষ কিছু অসুবিধা হল না নাগার। আকাশে মস্ত একটা চাঁদ উঠেই ছিল, সোজাসুজি জ্যোৎস্না এসে না পড়লেও ডোবার জলে প্রতিফলিত হয়ে যথেষ্ট আলো পড়ছিল। সাপের ভয়ও এখানে নেই, বেজীদের আস্তানার কাছে সাপ থাকে না।

 খবরটা দিয়ে কণিকার সঙ্গে ভাব করতে গিয়ে সে জানতে পারল, কণিকা তার বেজীও চায় না, তার সঙ্গে ভাব করতেও চায় না।

 ‘রূপার রামলক্ষ্মণ না?'

 'হ্যাঁ, কাকা দু’টাকা দিয়ে নকুলের কাছ থেকে কিনে দিয়েছে।' কণিকা সগর্বে নাগার দিকে তাকায়, নাগা তো জব্দ হয়ে গেছেই, এবার তার মনে আরও খানিকটা কষ্ট দেবার জন্য বলে, 'তোর সঙ্গে কথা বলতে