পাতা:মাঝির ছেলে - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মাঝির ছেলে
৮০

থেকেই মন্থর হয়ে গেল। বস্তাগুলি তুলবার সময় থেকেই জলকন্যার জন্য যা দিলবাবু বড়ই মমতা বোধ করেছিলেন, এ যেন অত্যাচার করা হচ্ছে তার লিঞ্চের ওপর আর জীবন্ত প্রাণীর মতইট লঞ্চ যেন সেটা অনুভব করছে। লাগে চুক্তি করা না থাকলে যাদববাবু এত বোঝাই নিতে কখনোই রাজী কতেন না। তার জলকন্যা কি গাধাবোট?

 এবার দেনাপাওনা নিয়ে নিতাই সাত কোনরকম গোলমাল করল না। বরং, ভিমনা থেকে আরম্ভ করে লঞ্চের সমস্ত খালাসী লস্করকে কিছু কিছু অতিরিক্ত টাকা পুরস্কার দিয়ে বসল। নিতাই সাহা টাকা বড় ভালবাসে, চালানী কারবার থেকে প্রচুর আয় হলেও টাকার লোভে সে চোরাই মাল কেনা বেচা করে, কিন্তু যাকে একবার সে পছন্দ ও বিশ্বাস করে তার সঙ্গে আর কোনরকম ব্যবসাদারী প্যাচ কষবার চেষ্টা করে না।

 কথায় কথায় সে বলে, “জানেন যাদববাবু, যাগে লগে কারবার করি, ভদ্রলোক নাই কওন যায়। তাগো লগে ভদ্রতা করুম কি? ফাকি দেওনের চেষ্টা যদি না করি তারা ভাববো। আমি বোকা হাবা মানুষ।”

 বিদায় নেবার সময় সে বলে গেল, “কয়দিন পরে আপনেরে ডাকুম সন্দ করি। বর্ষার আগে কয়টা কাম সাইরা রাখুম ভাবতেছি।”

 কিছুক্ষণ থেকে সাপুড়ের বাঁশীর আওয়াজ কাণে আসছিল, নিতাই চলে গেলে নাগা লঞ্চ থেকে নেমে সাপ খেলানো দেখতে গেল। একটা দোকানের সামনে সাপুড়েকে ঘিরে ভিড় জমেছে আর ভিড়ের ঠিক সামনেই দাড়িয়ে আছে পঞ্চ।

 “কখন আইলা নাগা?”

 ভোরে আইছি। এখানে কর কি?”

 ‘সাপ খেলান দেখি, আর কি করুম? চা খাইবা?”

 “দেইখা লই কেমন সাপ খেলায়।”

 সাপ খেলানোয় নতুনত্ব কিছু নেই, সেই গেরুয়া আলখাল্লা পরা সাপুড়ে, সেই ঝাঁপি, সেই একটানা সুরের বাঁশী। তবু সাপ খেলানো কখনো পুরানো হয় না, কখনো একঘেয়ে লাগে না। কেবল ঝাঁপির মুখ বন্ধ করে সাপুড়ে যখন বাঁশী বাজাতে বাজাতে চলে যায় তখন মনে