মানসী
মানসী সম্বন্ধে যে লিখেছ যে, তার মধ্যে একটা despair এবং resignation -এর ভাব প্রবল, সেই কথাটা আমি ভাবছিলুম। প্রতি দিনই আমি দেখতে পাচ্ছি, নিজের রচনা এবং নিজের মন সম্বন্ধে সমালোচনা করা ভারি কঠিন। আমি বের করতে চেষ্টা করছিলুম এই despair এবং resignation -এর মূলটা কোন্খানে। আমার চরিত্রের কোন্খানে সেই কেন্দ্রস্থল আছে যেখানে গিয়ে আমার সমস্তটার একটা পরিষ্কার মানে পাওয়া যায়। কড়ি ও কোমলের সমালোচনায় আশু[১] যখন বলেছিলেন জীবনের প্রতি দৃঢ় আসক্তিই আমার কবিত্বের মূলমন্ত্র তখন হঠাৎ একবার মনে হয়েছিল: হতেও পারে। আমার অনেকগুলো লেখা তাতে করে পরিস্ফুট হয় বটে। কিন্তু, এখন আর তা মনে হয় না। এখন এক-একবার মনে হয় আমার মধ্যে দুটো বিপরীত শক্তির দ্বন্দ্ব চলছে। একটা আমাকে সর্বদা বিশ্রাম এবং পরিসমাপ্তির দিকে আহ্বান করছে, আর-একটা আমাকে কিছুতে বিশ্রাম করতে দিচ্ছে না। আমার ভারতবর্ষীয় শান্ত প্রকৃতিকে য়ুরোপের চাঞ্চল্য সর্বদা আঘাত করছে— সেইজন্যে এক দিকে বেদনা, আর-এক দিকে বৈরাগ্য। এক দিকে কবিতা, আর-এক দিকে ফিলজাফি। এক দিকে দেশের প্রতি ভালোবাসা, আর-এক দিকে দেশহিতৈষিতার প্রতি উপহাস। এক দিকে কর্মের প্রতি আসক্তি, আর-এক দিকে চিন্তার প্রতি আকর্ষণ। এইজন্যে সবসুদ্ধ জড়িয়ে একটা নিষ্ফলতা এবং ঔদাস্য।
- ↑ আশুতোষ চৌধুরী