পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী.pdf/১২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

जनबी আশ্চৰ্য হিসাবের জন্য ছোট খোকার পেটটা একটু বড় হওয়া ছাড়া ছেলেমেয়েদের কারো শরীর তেমন খারাপ হয় নাই। রোগ হইয়াছে শুধু শ্যাম । শেষের দিকে শ্যামার যে মখমলের মতো মসৃণ উজ্জল চামড়াটি দেখা দিয়াছিল। তাহা মলিন বিবর্ণ হইয়া গিয়াছে। এক বছরে কারো বয়স এক বছরের বেশি বাড়ে না, শ্যামারও বাড়ে নাই, কিন্তু তাহাকে দেখিয়া কে তাহা ভাবিতে পারে । গত যে বসন্ত ব্যর্থ গিয়াছে তার আগেরটি উতলা করিয়াছিল কোন শ্যামাকে ? বনগাঁয়ে এই যে শীর্ণ নিম্প্রভিজ্যোতি শ্ৰান্ত নারীটি আসিয়াছে, শহরতলীর সেই বাড়িটির দোতলায় সমাপ্তপ্রায় নতুন ঘরটির ছায়ায় দাড়াইয়া বসন্তের বাতাসে ধানকলের ছাই উড়িতে দেখিয়া জেলের কয়েদী স্বামীর জন্য এরই যৌবন কি ক্ষোভ করিয়াছিল ? শেষের দিকে হারান ডাক্তার বারো টাকা ভাড়ায় একতলাতে একটি ভাড়াটে জুটাইয়া দিয়াছিল, সরকারী অফিসের এক কেরানী, সম্প্রতি স্ত্রী ও শিশুপুত্ৰ লইয়া দাদার সঙ্গে পৃথক হইয়া আসিয়াছে। কেরানী বটে। কিন্তু বড়ই তাহারা বিলাসী । হঁাড়ি কলসী, পুরানো লেপ-তোষক, ভাঙা রঙচটা বক্স প্ৰভৃতিতে শ্যামার ঘর ভরা থাকিত । ওরা আসিয়া ঝকঝকে সংসার পাতিয়া বসিল, জিনিসপত্র তাহদের বেশি ছিল না, কিন্তু যা ছিল সব দামী ও সুদৃশ্য। বৌটি, শ্যামা শুনিল বড়লোকের মেয়ে, স্কুলেও নাকি পড়িয়াছিল, স্বাধীন ভাবে একটু ফিটফাট থাকিতে ভালবাসে-বড় ভাইয়ের সঙ্গে ওদের পৃথক হওয়ার কারণটাও তাই। পৃথক হইয়া বৌটি যেন বঁাচিয়াছে। নিজের সংসার পাতিতে কি তাহার উৎসাহ । পথের দিকে যে ঘরে শ্যামা আগে শুইত তার জানালায় জানালায় সে নতুন পর্দা দিল, চিকণ কাজ করা দামী খাটটি, বোধহয় বিবাহের সময় পাইয়াছিল ; দক্ষিণের জানাল ঘোঁসিয়া পাতিল । আয়না বসানো টেবিলটি রাখিল ঘরে ঢুকিবার দরজার সোজা, অপর দিকের দেয়ালের কাছে। খাট টেবিল আর কাঠের একটি চেয়ার তাহার সমগ্ৰ আসবাব, তাই যেন তার ঢের। ভাড়ারে তাকের উপর মসলাপাতি রাখিবার কয়েকটি নতুন চকচকে টিন, কাচের জার, স্টোভ, চায়ের বাসন আর দুটি একটি টুকিটাকি জিনিস প্লাখিয়া, রাখিবার আর কিছুই তাহার রহিল না, সমস্ত ঘৱে একটি রিক্ত পরিচ্ছন্নতা ঝকঝাক কৱিতে লাগিল। সংসার করিতে করিতে s