পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী.pdf/৩১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সহরতলী যশোদা কিন্তু সংশয়ভাৱে নন্দকে বলিয়াছে, “উহু, কি যেন মতলব আছে লোকটার। নইলে এমন বাড়াবাড়ি করত না ।” নিমন্ত্রণে যাওয়ার কথায় অপরাজিত এবারও বলিয়াছিল, “আমি যাব ?” তারপর রওনা হওয়ার সময়ও সে আপত্তি করিয়াছে, বলিয়াছে, “দ্যাখো, শরীরটা বড় খারাপ লাগছে, ভিড়ের মধ্যে নাইবা গেলাম। আমি ? “একবারটি চলো লক্ষ্মী। গিয়ে না হয় একপাশে চুপটি করে বসে থেকে ৷” সকলকে অন্দরের মুখে ছাড়িয়া দিয়া জ্যোতিৰ্ম্ময় এদিক ওদিক ঘুরিয়া বেড়ায়। বাড়ীর সামনে প্ৰকাণ্ড হোগলার মণ্ডপ তোলা হইয়াছে, থামগুলি রঙীন কাগজ আর দেবদারু পাতায় ঢাকা, বাহিরের গাছগুলিকে লাল নীল আলোয় সাজান হইয়াছে। অনেকগুলি জোরালো আলোয় চারিদিক ঝলমল করিতেছে। পান সিগারেট আর সরবৎ বিতরণ করা হইতেছে হরদম, মাঝে মাঝে গোলাপজলের পিচকারিও মারা হইতেছে। চারিদিকে লোক গিজ গিজ করিতেছে, নানা অবস্থার নানা , বয়সের লোক-বাঙ্গালীই বেশী, অ-বাঙ্গালীও আছে। সকলেই বেশভূষা করিয়াছে প্ৰাণপণে, কিন্তু গরীবদের দেখিলেই চেনা যায়। কেবল পোষাক ভেদ করা দারিদ্র্য নয়, অনভ্যন্ত উৎসবের আবেষ্টনীতে সকলের দৈনন্দিন অভ্যস্ত জীবনের পরিচয় বিচিত্র ইঙ্গিতে প্ৰকাশ হইয়া যাইতেছে। সঙ্কোচ, ভয়, দীনতা, দুঃখ, রোগ, শোক, বিষাগ্ৰতা । তার নিজের ? চার পাঁচজন চেনা মানুষ জিজ্ঞাসা করিয়াছে, মুখ তার শুকনো কেন, তার কি অসুখ করিয়াছে ? এতো বড় ভয়ানক কথা যে, একটা নেকলেশ তাকে এমন অবস্থায় আনিয়া দিতে পারে যে, তাকে দেখিলে লোকের মনে হয়। সে অসুস্থ । ক্ৰমাগত গাড়ী আসিয়া নিমন্ত্রিতদের নামাইয়া দিয়া যাইতেছিল। জমিদার, ব্যঙ্কার, ব্যবসায়ী, উকিল, ব্যারিষ্টার, ডাক্তার। তিনজন মারোয়াড়ী ব্যবসায়ীর পরে দু’জন মন্ত্রীর আবির্ভাব ঘটিল,-একজন অন্য প্রদেশের । তারপর কয়েকজন বোম্বাইওয়ালা, পাঞ্জাবী ও য়ুরোপীয় ব্যবসায়ীর পিছনে আসিল দু’জন উচ্চপদস্থ রাজকৰ্ম্মচারী। দু’জনেই ইংরেজ। বোধ হয়। এদের অভ্যর্থনা করার জন্যই একজন বাঙ্গালী উচ্চপদস্থ রাজকৰ্ম্মচারী এতক্ষণ সত্যপ্ৰিয়ের কাছে দাড়াইয়া মোটা একটা সিগার টানিতেছিল । এদের একজনের সঙ্গে জ্যোতিৰ্ম্ময় চাকরীর প্রথম দিকে একবার দেখা করিতে গিয়াছিল । নিজে যায় নাই, সত্যপ্ৰিয় সঙ্গে করিয়া লইয়া গিয়াছিল । একটু চা পান আর ঘণ্টাখানেক নানা বিষয়ে আলোচনা হইয়াছিল। ঠিক যে Net