পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী.pdf/৩৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সহরতলী হয় বলিবার নয়। শুনিলে অন্য লোকের মনে হওয়া আশ্চৰ্য্য নয় যে, কিশোরকিশোরীর মাসিকপত্রে যে সব ধাঁধা থাকে দু’জনে বুঝি তারই উত্তর বাহির করিতেছে, একজন আরেক জনকে শুনাইতেছে এক একটি সঙ্কেত সূত্ৰ । সুবৰ্ণ হয়তো বলে, একশো যদি হ’ত- নন্দ সায় দেয়। আচমকা তিনটি মোটে শব্দ সুবণ উচ্চারণ করিয়াছে, কিন্তু দু’জনের কাছেই তার অর্থ পরিষ্কার । নন্দর যদি একশ’ টাকা বেতন হইত। আর নন্দ যদি জ্যোতিৰ্ম্ময়ের মত একটি বাড়ী ভাড়া করিয়া বাস করিত আর মেলামেশা করিত ভদ্রলোকের সঙ্গে অর্থাৎ সোজা কথায় নন্দ যদি জ্যোতিৰ্ম্ময়ের স্তরে ঠেলিয়া তুলিতে পারিত নিজেকে, তবে আর তাদের কোন ভাবনা ছিল না । একটুক্ষণ চোখে চোখে চাহিয়া থাকিয়া সুবণ হয়তো আবার বলে, দাদার চাকরী গেলেও এবার নন্দও সায় দেয় । জ্যোতিৰ্ম্ময়ের যদি চাকরী যায় এবং আর সে চাকরী না পায় এবং ভয়ানক গরীব হইয়া যশোদার বাড়ীর মতই একটা বাড়ীতে কায়-ক্লেশে দিন কাটাইতে বাধ্য হয় অর্থাৎ সোজা কথায়, জ্যোতিৰ্ম্ময় যদি নন্দর স্তরে নামিয়া আসে, তাহা হইলেও তাদের কোন ভাবনা ছিল না । আবার একটু চোখে চোখে চাহিয়া সুবণ হয়তো আবার আরও নীচু গলায় ফিসফিস করিয়া বলে, বৌদির কথা তুলে খুব খোচাচ্ছি, কিন্তু অপরাজিতার কথা তুলিয়া সুবৰ্ণ জ্যোতিৰ্ম্ময়কে খুব খোচাইতেছে, সে যাতে চাকরী ছাড়িয়া দিয়া গরীব হইয়া যায়। কিন্তু অপরাজিতার স্মৃতির অন্ত্রেও সুবণ তার মৰ্ম্মভেদ করিতে পারিতেছে না, সমস্ত খোচানো ব্যর্থ হইয়া যাইতেছে। দু’জনে প্ৰায় একসঙ্গে নিশ্বাস ফেলে। নিশ্বাস ফেলিয়া নন্দ হয়তো বলে, যদি না হয় ? সুবণ হয়তো জবাব দেয়, তাহ’লে তাই করব । অর্থাৎ কিছুতেই যদি কিছু না হয়, তাহা হইলে অগত্যাই দু’জনে তারা হাত ধরাধরি করিয়া নিরুদেশ হইয়া যাইবে । এমনিভাবে কথার অতি ক্ষুদ্র ভগ্নাংশ আর মুখের ভাব আর দৃষ্টি বিনিময় দিয়া অনায়াসে তারা পরস্পরের মনের কথা বুঝিতে পাৱে কি সৃষ্টিছাড়া মনের মিলটাই যে তাদের হইয়াছে। VO2.