পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী.pdf/৪০৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সহরতলী পাঠানোর আয়োজন করে । দেশের বাড়ীতে আত্মীয়স্বজন আছে। সত্যপ্রিয়ের এক পিসতুতো বোন স্বামীপুত্ৰ নিয়া অনেকদিন হইতে এখানে আছে, হঠাৎ তার দেশে গিয়া বাস করার সখ চাপিল । সত্যপ্ৰিয়ের ঈঙ্গিতে অনেকের মনে অনেকরকম সখাই জাগিয়া থাকে। ঠিক হয়, যোগমায়াও এদের সঙ্গে যাইবে। প্রথমে যোগমায়া কথাটা হাসিয়াই উড়াইয়া দেয়, তারপর যখন বুঝিতে পারে তাকে দেশে পাঠানোর ইচ্ছাটা সত্যপ্ৰিয়ের, তখন সে মুখ ভার করিয়া বলে, “না। বাবা, আমি এখন কোথাও যাব না।” সত্যপ্ৰিয় বলে, “ক’দিন বেড়িয়ে আয় । বিয়ের পর দেশের সবাই তোকে CIRCVS bog ” শুনিয়া যোগমায়া আর আপত্তি করে না । মেয়ে-জামাইকে দেশের আত্মীয়স্বজনকে দেখাইবার ইচ্ছা যদি সত্যপ্ৰিয়ের হইয়া থাকে, সে তো ভাল কথা ! স্বামীর সঙ্গে সর্বত্র যাইতেই সে রাজী আছে। “দুশো টাকা দেবে বাবা আমায় ?” ‘বিয়ের পর তুই যে হরদম টাকা নিচ্ছিস ।--কি করবি টাকা দিয়ে ? “নতুন রকম একটা গয়না কিনব । আজকেই দাও বাবা-আজকেই কিনব।” বিবাহের পর বাপের ভয়টা যেন যোগমায়ার একটু কমিয়াছে-সব মেয়েরই কমে। বিবাহের পর খুব কড়া মেজাজের বাপিও মেয়ের সঙ্গে একটু খুন্সী মেজাজেই মেলামেশা করে, মেয়েকে কিছু স্বাধীনতা দেয় । বাপ ও মেয়ের মধ্যে অতিরিক্ত একটা সম্পর্ক যেন কোথা হইতে কি ভাবে গড়িয়া উঠে । কিন্তু যোগমায়া যখন টের পায় তাকে একাই যাইতে হইবে, যামিনী সঙ্গে যাইবে না, তখন সে হঠাৎ বাকিয়া বসে। না, তার যাইতে ইচ্ছা করিতেছে না, সে যাইবে না । শরীরটা ভাল নয়। তার । কি হইয়াছে ? এই গা ম্যাজ-ম্যাজ করিতেছে, মাথা ঘুরিতেছে, আরও অনেক কিছু হইয়াছে। সন্তানের এ রকম মুখোমুখি অবাধ্যতার অভিজ্ঞতা সত্যপ্রিয়ের জীবনে এই প্ৰথম। প্রথমটা সে কেমন থতামত খাইয়া যায়। তারপর ক্ৰোধে পৃথিবী অন্ধকার দেখিতে থাকে । পিসতুতো বোন বলে, “কি করব দাদা, যাব। মায়া তো কিছুতে যেতে রাজি নয় । যামিনীর এমন অসুখের সময় ওকে ফেলে কোথাও যেতে চায় না ।” è Yà