পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী.pdf/৪১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মাণিক গ্ৰন্থাবলী সম্পর্কটা গড়িয়া উঠিয়াছিল। আপনা হইতে, স্বাভাবিক ভাবে। প্ৰথমে ওদের কেবল ভাড়াটে হিসাবে যশোদা বাড়ীতে থাকিতে দিয়াছিল মাত্র, ওদের সুখ-দুঃখ ভালমন্দের ভাবনাটাও যে তাকে একদিন ভাবিতে হইবে সে তখন এ কথাটা কল্পনাও করিতে পারে নাই । চোখের সামনে এই শ্রেণীর জীবগুলির কয়েকজন প্ৰতিনিধির জীবন-যাপনের প্রক্রিয়া দেখিতে দেখিতে যশোদা টের পাইয়াছিল, এরা সব বয়স্ক শিশুমাত্ৰ, অভাবে আর চাপে খানিকটা বিগড়াইয়া গিয়াছে। একটু একটু করিয়া তখন মায়া জাগিয়াছিল যশোদার মধ্যে। একটু একটু করিয়া তারপর সে জড়াইয়া গিয়াছিল। ওদের জীবনের সঙ্গে । চাদের জন্য সব সময় যশোদার মনটা তখন হু-হু করিত, এতগুলি বয়স্ক শিশুকে পাইয়া শোকটা তার কমিয়া গিয়াছিল । কিন্তু ওরা তাকে ত্যাগ করিয়াছে । সত্যপ্ৰিয়ের কারসাজিতে আর তাকে ওৱা বিশ্বাস করে না। তাকে শক্ৰ জানিয়া, তার সংস্পর্শে আসিলে বিপদ ঘটিবে জানিয়া, সকলে তফাতে সরিয়া গিয়াছে । ওদের ভালবাসিবার ভাণ করিয়া সে উপরওয়ালাদের স্বার্থসাধনের সাহায্য করে, ওদের ন্যায্য দাবী ত্যাগ করায়, ধৰ্ম্মঘট ভাঙিয়া দেয়, কাজ হইতে তাড়ায় । এতকাল পরে যশোদার সম্বন্ধে ওদের এই ধারণা জন্মিয়াছে ! অর্থহীন অভিমানকে প্রশ্ৰয় দেওয়ার মানুষ যশোদা নয়, কোন ব্যাপারকে ব্যক্তিগত কল্পনার বাম্পে সে ফাপাইয়া তোলে না । বঁচিয়া থাকাটাই যাদের পক্ষে একটা বীভৎস সংগ্ৰাম, অতি কৃতজ্ঞতার ধার ধাৱিলে কি তাদের চলে ? কৃতজ্ঞতাও ওদের যথেষ্টই আছে। কাজ না থাকার সময় দুদিন যাকে যশোদা খাইতে দিয়াছে, কাজ পাওয়ার পরেও যশোদার একটি ধমকে সে যে কঁাদ-কঁাদ হইয়া যাইত, বসিয়া বসিয়া যশোদা দু’দণ্ড সুখদুঃখের গল্প করিলে সকলে যে কৃতাৰ্থবোধ করিত, এ কি কৃতজ্ঞতা নয় ? কিন্তু যখন জানা গেল যশোদা তলে তলে তাদের ক্ষতিই করে, যশোদার বাড়ীতে থাকিলে কাজ থাকে না, শ্রমিক সমিতি হইতেও যখন উপদেশ দেওয়া হইতে লাগিল যশোদাকে বর্জন করিবার, ওদের তখন আর কি করিবার ছিল ? এসব কথা যশোদা ভাবিয়াছে। কিন্তু মন তার অবুঝ হইয়া পড়িয়াছে, কিছুই আর মানিতে চায় না। সুবৰ্ণকে নিয়া উধাও হইয়া গিয়া নন্দ তাকে আরও বেশী কাবু করিয়া দিয়াছে। নিজেকে যশোদার কেমন অপরাধী মনে হয়। মনে আৱ 8 8ኳም