পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S8 মানিক-গ্ৰন্থাবলী এই সব ভাবিয়া শ্যামা শীতলকে বনগা যাইতে বাধা দিল না। জিনিস-পত্ৰ মন্দা আগের দিনই বঁাধিয়া ছাদিয়া ঠিক করিয়া রাখিয়াছিল। একচড়া আলুভাতে ফুটাইয়া কালু ও কানুকে খাওয়াইয়া, কোলের ছেলেটির জন্য বোতলে দুধ ভরিয়া লইয়া শীতলের সঙ্গে সে রওনা হইয়া গেল। গাড়িতে সময় মন্দা একটু কঁদিল, শ্যামাও কয়েকবার চোখ গাড়ি যেন চোখের আড়াল হইল না, শ্যামার ছেলের জর বাড়িতে আরম্ভ করিল। বিকে দিয়া কই মাছ আনাইয়া শুষ্ঠামা এবেলা শুধু ঝোল-ভাত রাধিবার আয়োজন করিযাছিল, সব ফেলিয়া রাখিয়া দুরূদুরু বুকে অবিচলিত মুখে সে েলেকে কোলে করিয়া বসিল । নিয়তির খেলা শ্যামা বোঝে বৈ কি ! মন্দার ভার এড়াইবার লোভে শীতলকে যাইতে দেওয়ার দুমতি নতুবা তাহার হইবে কেন ? স্বামী আবার বিবাহ করিয়াছে বলিয়া মন্দা চিরকাল ভাইয়ের সংসারে পড়িয়া । থাকিত, এ আশঙ্কা শ্যামার কাছে একটা অর্থহীন মনে হইল। কাধে শনি ভর না করিলে মানুষ ভবিষ্যতের একটা কাল্পনিক অসুবিধার কথা ভাবিয়া োলের রোগকে অগ্ৰাহ করে ? ছেলে যত ছটফট করিয়া কঁাদিতে লাগিল, অনুতাপে শুমার মন ততই পুড়িয়া যাইতে লাগিল। যেমন ছোট তাহার মন, তেমনি উপযুক্ত শাস্তি হইয়াছে। তার মত স্বার্থপর হীনচেতা স্ত্রীলোকের ছেলে যদি না মরে তো মরিবে কার? একা সে এখন কি করে ! ঠিক ঝি বাসন মাজিতেছিল। তাহাকে ডাকিয়া শ্যামা বলিল, খোকার বড় জর হয়েছে সত্যভামা, বাবু বনগা গেলেন, কি হবে এখন ? ঝি শতমুখে আশ্বাস দিয়া বলিল, কমে যাবে মা, কমে যাবে। --ছেলেপিলের এমন জর জ্বালা কত হয়, ভেবেনি । তুমি আজ কোথাও যেয়ে না। সত্যভামা। কিন্তু না গিয়া সত্যভামার উপায় নাই। সে ধরিতে গেলে স্বামীহীনা, কিন্তু তাহার চারটি ছেলেমেয়ে আছে। , তিন বাড়ি কাজ করিয়া সে ইহাদের আহার যোগায়, শুঢ়ামার কাছে বসিয়া থাকিলে তাহার। চলিবে কেন ? সত্যভামার বড় মেয়ে রাণীর বয়স দশ বছর, তাহাকে আনিয়া শু্যামার কাছে থাকিতে বলিয়া সে সরকারদের কাজ করিতে চলিয়া গেল। রাণীর একটা চোখে আঞ্জিনা হইয়াছিল, চোখ দিয়া তাহার এত জল পড়িতেছিল, যেন কার জন্য শোক করিতেছে। শ্যামা এবার একেবারে নিঃসন্দেহ হইয়া, গেল। এমন যোগাযোগ, এত সব অমঙ্গলের চিহ্ন, একি ব্যর্থ যায় ? আজি দিনটা মেঘলা করিয়া আছে। শীত পড়িয়াছে কনকনে। খোকার জন্বরের তাপে শু্যামার কোল যত গরম হইয়া ওঠে, হাত পা হইয়া আসে তেমনি ঠাণ্ডা। মাঝে মাঝে শ্যামার সর্বাঙ্গে কাপুনি ধরিয়া যায়। বেলা বারোটার DD SODDBB DD DBD DBB gB S BDD S DBDDBBB শ্ৰামা আধমরা হইয়া গিয়াছিল, তবু, তাহার প্রথম ছেলেকে হারানোর শিক্ষা সে ভোলে নাই,--তাড়াতাড়ি নয়, বাড়াবাড়ি নয়। এরকম উত্তেজনার সময় ধীরতা বজায় রাখা অনভ্যস্ত অভিনয়ের সামিল, শ্যামার চিন্তা ও কাৰ্য দুই অত্যন্ত শ্লথ হইয়া গিয়াছিল। তিনবার থামোমিটার দিয়া সে ছেলের সঠিক টেম্পরেচার ধরিতে পারিল। একশ তিন উঠিয়াছে। জর এখনো বাড়িতেছে বুঝিতে পারিয়া রাণীকে সে ওপাড়ার হারান ডাক্তারকে ডাকিতে পাঠাইয়া দিল। এতক্ষণে সে টের পাইয়াছে জরের বৃদ্ধি স্থগিত হওয়ায় প্রতীক্ষায় এতক্ষণ ডাক্তার ডাকিতে না পাঠানো তাহার উচিত হয় নাই। হারান ডাক্তার যেমন গম্ভীর তেমনি মন্থর । আজ যদি রোগী দেখিরা ফিরিতে তাহার বেলা হইয়া থাকে, স্নান করিয়া খাইয়া ব্যাপার দেখিতে আসিবে সে তিন ঘণ্টা পরে। রাণী কি রোগীর অবস্থাটা তাহাকে বুঝাইয়া বলিতে পরিবে ? সামান্য জর মনে করিয়া হারান ডাক্তার যদি বিকালে দেখিতে আসা স্থির করে ? ছেলেকে ফেলিয়া রাখিয়া শ্যামা সদর দরজায় গিয়া পথের দিকে তাকায় । রাণীকে দেখিতে পাইলে ডাকিয়া ফিরাইয়া একটি কাগজে হারান ডাক্তারকে কয়েকটি কথা লিখিয়া দিবে। রাণীকে সে দেখিতে পায় না। শুধু পাড়ার ছেলে বিনু ছাড়া পথে কেহ নাই। শ্যাম ডাকে, আ বিনু, অ! ভাই বিনু শুনিছ ? কি ? খোকার বডড জ্বর হয়েছে ভাই, কেমন অজ্ঞানের মত হয়ে গেছে, লক্ষ্মী দাদাটি, একবার ছুটে হারান ডাক্তারকে গিয়ে বল গে আমি পারব না। -বিনু বলে । শ্যামা বলে, ও ভাই বিনু শোন ভাই একবার বাড়াবাড়ি ? সে উতলা হইয়াছে ? ঘরে গিয়া শ্যামা কাদে। দেখো, ছেলে ঘন ঘন নিশ্বাস ফেলিতেছে। চোখ বুজিয়া নিশ্বাস ফেলিতেছে ওকি আর চোখ মেলিবে ? হারান ডাক্তার দেরি না করিয়াই আসিল । হারান যত মন্থর হোক, তার পুরানো নড়বড়ে ফোর্ড গাড়িটা এখনো ঘণ্টায় বিশ মাইল যাইতে পারে। ভাত খাইয়া সে ধীরে ধীরে পান চিবাইতেছিল, ঘরে ঢুকিয়া সে প্রথমে চিকিৎসা করিল শ্যামার। বলিল, কেঁদো না বাছা । রোগ নির্ণয় হবে না । কেমন তাহার রোগ নির্ণয় কে জানে, খোকার গায়ে একবার হাত দিয়াই হুকুম দিল, এক গামলা ঠাণ্ডা জল, কলসী CRび卒 AびF1 | শুঠাম গামলায় জল আনিলে হারান ডাক্তার ধীরে ধীরে খোকাকে তুলিয়া গলা পৰ্যন্ত জলে ডুবাইয়া দিল, এক হাতে সেই অবস্থায় তাহাকে ধরিয়া রাখিয়া অন্য হাতে ভিজাইয়া দিতে লাগিল তাহার মাথা । খোকার মারি অনুমতি চাহিল। না, এরকম বিপজ্জনক চিকিৎসার কোন কৈফিয়ৎ ও দিল না।