পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

6.br যে বৈশাখে আমাদের বকুলের বিবাহ হইল, তার আগের ফাস্থনে বিবাহ হইয়াছিল সুপ্রভার মেয়েটর, বিবাহের তিন চার দিন আগে কলিকাতা হইতে বিধানের সঙ্গে শঙ্করও আসিয়াছিল। বয়সের আন্দাজে বকুল মস্ত হইয়া উঠিয়াছিল, শঙ্কর ভাবিতে পারে নাই বকুল এত বড় হইয়াছে, আর এত লজ্জা হইয়াছে বকুলের, আর এত সুন্দর হইয়াছে সে। মেয়ের সম্বন্ধে শুষ্ঠামা যে এত সাবধান হইয়াছে তাও কি শঙ্কর জানিত ? বিবাহের পরদিন দুপুরবেলা বকুলকে আব শ্যামা দেখিতে পায় না। কোথায় গেল বকুল ? বাড়িতে পুরুষ গিজগিজ করিতেছে, যেখানে যেখানে মেয়ের একত্ৰ হইয়াছে বকুল তো সেখানে নাই ? হাতের কাজ ফেলিয়া রাখিয়া শু্যামা এখানে খোজে। ওখানে খোজে, একে তাকে জিজ্ঞাসা করে। একজন বলিল, এই তো দেখলাম। এখানে খানিক LBDLDES SDD BB DBBBDDLEDBL LLDLSDS BBS বা ৬র পিছনে কলাবাগান, কলাবাগানে সেই ঢেকিঘর তাই বটে, ঢেকিঘরে টেকিটার উপর বসিয়া শঙ্কর আর বকুল কথা বলিতেছে বটে। ঘরের কোণে এখানে বকুল আর এখন পুতুল খেলা করে না, খেলাধর তার ভাঙিয়া গেছে, শুধু আছে চিকু, কতবার ঘর লেপা হইয়াছে আজো চারিদিকে উচু আলোর চিত্ত্ব, পুকুরের গত মিলাইয়া যায় নাই, বেড়ায় যে শিউলিবোটার রঙে ছোপানো পৃষ্ঠাকােডাটি গোজা আছে। সে তো বধুলের পুতুলেরই জামা । পুতুল খেলার ঘরে কি ছেলেখেলা আজ কারতেছে বকুল ? একটু বাড়াবাড়ি রকম ছাকাকাছি বসিয়া আছে ওরা, আর কিছু নয় । না, বকুলের হাতটিও শঙ্করের হাতে ধরা নাই । শ্যামা বলিয়াঢ়িল, ও বকুল, এখানে বসে আছিস তুই ? মেয়ে জামাই যাবে যে এখন, আয় চলে আয় | বকুল তো আসিল, কিন্তু মেয়ের মুখ রাঙা কেন, চোখ কেন হলো ছলে ?-শঙ্কর আসিয়াছে চার পাঁচদিন, সকলের সামনে শঙ্করের সঙ্গে কত কথা বকুল বলিয়াছে, দু’চার মিনিট এক কথা বলিবার সময়ও কতবার শুষ্ঠামা হঠাৎ আসিয়া ওদের দেখিয়াছে, শ্যামাকে দেখিয়াও কথা শঙ্কর বন্ধ করে নাই, বকুল হাসি থামায় নাই। ঢেকি ঘরে আজ ওরা কোন নিষিদ্ধ বাণীর আদান প্ৰদান করিতেছিল, বকুলের মুখে যা রঙ আনিয়াছে, চোখে আনিয়াছে জল ? কি বলিতেছিল। শঙ্কর বকুলকে ? শ্যামা একবার ভাবিয়াছিল। বকুলকে জিজ্ঞাসা করিবে । শেষে কিছু না বলাই ভাল মনে করিয়াছিল। কিছুই হয় তো নয়। হয় তো নিজন ঢেকি ঘরে শঙ্করের কাছে বসিয়া থাকার জন্যই বকুল লজ্জা পাইয়াছিল, ওখানে ও ভাবে বসিয়া থাকা যে তার উচিত হয় নাই বকুল কি আর তা বোঝে না। তারপর যে কদিন শঙ্কর এখানে ছিল, আর তিনটি দিন মাত্র, বকুলকে শুঙ্গামা একাদণ্ডের জন্য চোখের আড়াল করে নাই । মানিক-গ্ৰন্থাবলী বকুল রাগ করিয়া বলিয়াছিল, সারাদিন পেছন পেছন ঘুরছে কেন বলত ? বকুলের বোধ হয় অপমান বোধ হইয়াছিল। শ্যামা বলিয়াছিল, পেছন পেছন আবার তোর ঘুরলাম কখন ? তারপর বকুল কঁাদিয়া ফেলিয়াছিল, গিয়া বসিয়া ছিল শীতলের কাছে, সারাটা দিন । দু'মাস পরে বৈশাখ মাসে বকুলের বিবাহ হইয়াছিল। ছেলের নাম মোহিনী, ছেলের বাপের নাম বিভূতি, নিবাস কৃষ্ণনগর। বিভূতি ছিল পোষ্টমাষ্টার, এখন অবসর লইয়াছে। মোহিনী পঞ্চাশ টাকায় ঢুকিয়াছে পোষ্টাপিসে, আশা আছে বাপের মত সেও পোষ্টমাষ্টার হইয়া অবসর লইতে পরিবে । মোহিনী কাজ করে কলিকাতায়, থাকে কাকার বাড়ি, যার নাম শ্ৰীপতি এবং যিনি মাচেণ্ট আপিসের কেরাণী । ছেলেটি ভাল, আমাদের বকুলের বর মোহিনী। শান্ত নম্র স্বভাব, পঞ্চাশ টাকার চাকরী করে বলিয়া এতটুকু গৰ্ব নাই, প্ৰায় শঙ্করের মতই লাজুক। দেখিতে মন্দ নয়, রঙ একটু ময়লা কিন্তু কি চোেখ - বকুলের চোখের মতই বড় হইবে। জামাই দেখিয়া শ্যামা খুগ্ৰী হইয়াছে, সকলেই হইয়াছে। জামাইএর বাপখুড়ার ব্যবহারেও কারো অসুখা হওয়ার কারণ ঘটে নাই, শ্বশুর বাড়ি হইতে বকুল ফিরিয়া আসিলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করিয়া জানা গিয়াছে শাশুড়ী ননদেরাও বকুলের মন্দ নয়, বকুলকে তারা পছন্দও করিয়াছে, আদর যত্ন মিষ্টি কথারও কমতি রাখে নাই, কেবল এক পিস (শাশুড়ী আছে বকুলের সেহি যা রূঢ় কথা বলিয়াছে দু'একটা-বালিয়াছে, ধেড়ে মাগী, বলিয়াছে তালগাছ ! ধোয়া পাকা মেঝেতে প! পিছলাইয়া পড়িয়া গিয়া বকুল যখন ডান হাতের শাখাটি ভাঙ্গিয়া ফেলিয়াছিল বিশেষ কিছু কেহ তখন তাহাকে বলে নাই, কেবল ওই পিস শাশুড়ী অনেকক্ষণ বকাঝাঁকি করিয়াছিল, বলিয়াছিল অলক্ষ্মী, বলিয়াছিল বজাত । বলুক, পিসশাশুড়ী কে ? শাশুড়ী ননন্দই আসল, তারা ভাল হইলেই হইল। বকুল বলিয়াছিল, না মা, পিস শাশুড়ীর প্রতাপ ওখানে সবার চেয়ে বেশি, সবাই তার কথায় ওঠে বসে। ঘরদের তার কিনা সব, নগদ টাকা আর সম্পত্তিও নাকি অনেক আছে শুনলাম, তাইতে সবাই তাকে মেনে চলে। বুড়ীর ভয়ে কেউ জোরে কথাটি কয় না মা। তাহা হইলে ভাবনার কথা বটে। খ্যামা অসন্তুষ্ট হইয়া বলিয়াছিল, কদিন ছিলি তার মধ্যে শাখা ভেঙ্গে বুড়ীর বিষনজরে পড়লি । বৌ-মানুষ তুই সেখানে, একটু সাবধানে চলাফেরা করতে হয় । বকুল বলিয়াছিল, পা পিছলে গেল, আমি কি করব ? আমি তো ইচ্ছে করে পরিনি।