পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

研a i VeS কেমন করিয়া নিঃশেষ হইয়া গেল ? অপচয় করিয়াছে নাকি সে ? হয়ত আরও হিসাব করিয়া খরচ করা উচিত ছিল। এক সঙ্গে অনেকগুলি টাকা হাতে পাইয়া নিজেকে হয় তো সে বড়লোক ঠাওরাইয়াই বসিয়াছিল। তবে একথা সত্য যে এ ক'বছর একটি পয়সাও ঘরে আসে নাই। ফোটা ফোটা করিয়া ঢালিলেও কলসীর জল একদিন শেষ হইয়া যায়। বিধানের পড়ার খরচও কি সহজ ! বকুলের বিবাহেও ঢের টাকা লাগিয়াছে। কিন্তু এখন উপায় ? শ্যামা এবার একটু মন দিয়া শীতলের ভাবভঙ্গি লক্ষ্য করিতে লাগিল। খায় দায় তামাক টানিয়া তাস পাশা খেলিয়া দিন কাটায়, হাটে একটু খোড়াইয়া, বদহজমে ভোগে, রাত্রে ভাল ঘুম হয় না। তবু কিছু কি শীতল করিতে পারে না ? ঘরে বসিয়া থাকিয়াই হয়ত লে একেবারে সারিয়া উঠতে পারিতেছে না, কাজে কর্মে মন দিলে হয়ত সুস্থ হইবে ! চুলে শীতলের পাক ধরিয়াছে। বিবৰ্ণ কপালের ঠিক উপরে একগোছ! চুল একেবারে সাদা হইয়া গিয়াছে। না, বয়স শীতলের কম হয় নাই। বিবাহ সে বেশি বয়সেই করিয়াছিল, বয়স এখন ওর পঞ্চাশের কাছে গিয়াছে বৈকি। তত্ত্ব, পঞ্চাশ বছর বয়সে পুরুষ মানুষ কি রোজগার করে না ? চারান পয়ষটি বছর পর্যন্ত কতটাকা উপাৰ্জন করিয়াছে, শীতল কি কিছু ঘরে আনিতে পারে না, যৎসামান্য ? পঞ্চাশটা টাকা অন্ততঃ ? আর কিছু হোক বা না হোক, বিধানের পড়ার খরচ তো দিতে হইবে। মৃদু মৃদু শীত পড়িয়াছে। কোঁচার খুঁট গায়ে জড়াইয়া বাহিবের অঙ্গনের জাম গাছটার গোড়ায় বেতের মোড়াতে বসিয়া শীতল তামাক টানে। বাড়ির পোষা কুকুরটা পায়ের কাছে মুখ গুজিয়া চুপচাপ শুইয়া থাকে, মাঝে মাঝে শীতলের পা চাটিয়া দেয়। কুকুরটার সঙ্গে শীতলের বড় ভাব। কুকুরটাও তার বড় বাধ্য। শ্যামা কাছে আসিয়া মানুষ ও পশুর চোখ বোজা নিবিড় তৃপ্তির। আলস্য চাহিয়া 20२ ) কিন্তু উপায় কি ? শু্যামার আর কে আছে, কে তার জন্য বাহির হইবে উপাজন করিতে ? ধীরে ধীরে মিষ্টি করিয়াই কথাগুলি সে বলে, ভৗত বিস্মিত চোখে তার মুখের দিকে চাহিয়া শীতল শুনিয়া যায়। কিছু সে যেন বুঝিতে পারে না, সংসার, কতব্য, টাকার অভাব, খোকার পড়া সব জড়াইয়া শ্যামা যেন তাকে ভয়াবহ শাসনের ভয় দেখাইতেছে। শীতল মাথা নাড়ে, সন্দিগ্ধভাবে । সে কি করিবে ? কি করিবার ক্ষমতা তার আছে ? শিশুর মত আহত কণ্ঠে সে। ৰলে, আমার যে অসুখ গো ? অসুখ তা জানি, সেরে তো উঠেছ খানিকট, ঠাকুরজামাইকে বলে কম খাটুনির একটা কাজ টােজ তুমি করতে পারবে। আমি আর কতকাল চালাব ? বাড়ির টাকা পেলে, বাড়িটা কার ?-শীতল বলে। বটে। তাই তবে শীতল মনে করিয়াছে, তার বাড়ির টাকায় এতকাল চলিয়াছে আর তাহার কিছু করিবার প্রয়োজন নাই ? এতকাল সেই সংসার চালাইয়াছে, এই কথা ভাবিয়া রাখিয়াছে শীতল ? এবার তাই তাহার বসিয়া থাকার অধিকার জন্মিয়াছে । এসব জ্ঞান তো টনটনে আছে দেখি বেশ ?-শ্যামা বলে। কুকুরটা উঠিয়া যায়। শীতলের দৃষ্টি তাহাকে অনুসরণ করে। তারপর আবার কাতর কণ্ঠে সে বলে, আমার অসুখ যে গো ? একদিনে হাল ছাড়িবার পাত্রী শ্যামা নয়। বার বার শীতলকে সে তাহাঁদের অবস্থাটা বুঝাইবার চেষ্টা করে। কড়া কথা সে বলে না, লজ্জা দেয় না, অপমান করে না । আবার বাহির হইয়া ঘলে টাকা আনা শীতলের পক্ষে এখন কত কঠিন সে তা বোঝে, পারুক না পারুক গা-ঝাড়া দিয়া উঠিয়া শীতল একবার চেষ্টা করুক, এইটুকু শুধু তার ইচ্ছ। রাখালকে শ্যামা একদিন বলিয়াছিল, ঠাকুরজামাই, আবার তো। আমি নিরুপায় হলাম ? কেন ? অতটাকা কি করলে বৌঠান ? বলেছিলাম টাকা তুমি রাখতে পারবে না ঠাকুরজামাই, ছেলেকে আমার বি-এটা আপনি পাশ করিয়ে দিন। পড়ার খরচ দেবার কথা বলছি বৌঠান ? হ্যা, রাখাল এবার রাগ করিয়াছিল। সে কি রাজা না জমিদার ? কতটাকা মাহিনা পায় সে শ্যামা জানে না ? একি অন্যায় কথা যে শ্যামা ভুলিয়া যায় ক্ষমতার মানুষের একটা সীমা আছে, আজ কতবছর শ্যামা সকলকে লইয়া এখানে আছে, কত অসুবিধা হইয়াছে রাখালের, কত টানাটানি গিয়াছে তাহার কিন্তু কিছু সে বলে নাই, বলে নাই এই ভাবিয়া যে যতদিন তার দুমুঠ ভাত জুটিবে, খামার ছেলেমেয়েকে একমুঠ তাকে দিতে হইবে, সেটা তার কর্তব্য। তাই কি শুষ্ঠামা যথেষ্ট মনে করে না একটা ছাপোষা মানুষের পক্ষে ? ঠাকুরজামাই, একবছর আমিও তো কিছু কিছু সংসার খরচ দিয়েছি ? বলিয়া শ্যামা সঙ্গে সঙ্গে অনুতাপ করে। অনুগ্রহ চাহিতে আসিয়া এমন কথা বলিতে আছে। মুখখানা তাহার শুকাইয়া যায় | রাখাল বলে, তা জানি বৌঠান, আজ বলে নয় গোড়া থেকে জানি কৃতজ্ঞতা বলে তোমার কিছু নেই। যাক, আমার কর্তব্য আমি করেছি, নিন্দ প্ৰশংসার কথা তো আর ভাবিনি, এখানে থাকতেও তোমাদের আমি বারণ