পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/১৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SOD निक গ্রন্থাবলী আর ছেড়া জামা গায়ে চৌরঙ্গীর বড়-সাহেবী হােটেলে খানা খাইতে গিয়া বড় বড় লোকের সঙ্গে মেলামেশা করা যেন তার কাছে সমান। মাঝে মাঝে সে এখানে আসে, বিনা চেষ্টাতে সকলের সঙ্গে মিশ খাইয়া যায়, তবু যেন একটা দূরত্ব ও ব্যবধান কোন সময়েই ঘোচে না। ঠিক অহঙ্কার নয়, মানুষগুলিকে অবজ্ঞা করা নয়, এমন একটা নির্বিকার উদাসীনতার সঙ্গে মানুষের দৈনন্দিন জীবনের খুঁটিনাটি তুচ্ছ করিয়া চলা-প্রতিবেশীর নিন্দায়, গুজবের স্বষ্টিতে, ঘরের ব্যাপারে সঙ্গে মিশাইয়া পৃথিবীর রাজনীতির আলোচনায়, তর্কে আর কলহ-বিবাদে সকলে যখন মসগুল হইয়া যায়। মণীশ তাহাতে যোগ দিতে কম্বর না করিলেও, ঞিপের C হয় সকলের ছেলেমানুষীতে সে তলে তলে নিছক আমোদ উপভোগ করিতেছে। দু'দিন আগে বিকেলবেলা পরিতোষ আসিয়াছিল, শোকে মুহামান পরিতোষ । একটি চেয়ারও খালি ছিল না, সকলের আগে নিজের চেয়ার ছাড়িয়া উঠিয়া মণীশ তাহাকে বসিতে দিয়াছিল। কিন্তু তখনও তার মুখে এতটুকু সহানুভূতির চিহ্ন দেখিতে পায় নাই। মুখ দেখিয়া বরং মনে হইয়াছিল, সে বুঝি ভাবিতেছে অনেক দূরে নৌকাডুবিতে এক পরিবার নিশ্চিহ্ন হইয়া গেলে, এখানে একটা মানুষ আধমরা হইয়া যায় কেন ! ভালো লাগে না, কিন্তু মণীশকে তুচ্ছও সে করিতে পারে না। সময়ে সময়ে ত্ৰিষ্টপের মনে হয়, আসলে এটা তার ভাল না-লাগা মোটেই নয়, আর দশজনের মত মানুষের সুখ দুঃখ মানুষটাকে বিচলিত করে না বলিয়া তার অভিমান হইয়াছে, তার প্রতিকারহীন অভিমানের জালাকে মনে হইতেছে বিরাগ । “মনটা ভাল নেই, মণীশদা।” “মন ভাল নেই ? সে কি কথা ? মন খারাপ করেছ কেন ? “আমি করিনি। ব্যাপারটা শুনুন--” মণীশ শুনিয়া যায় আর শুনিতে শুনিতে তার মুখ গভীর হওয়ার বদলে যেমন ছিল তেমনি থাকে, হাসি হাসি ভাবটুকু পৰ্যন্ত মিলাইয়া যায় না। দেখিয়া খ্রিষ্টীপের ভাল-না-লাগা অথবা অভিমান উথলিয়া উঠিতে থাকে। কথা শেষ করিয়া ঝাঁঝালো সুরে সে তাই জিজ্ঞাসা করিল ‘হাসিবার কি হ’ল ?” মণীশ বলিল, “হাসি নি। চাকরী করতে চাওনা বলছি, বড় কিছু করতে চাও। কি করবে সেটা এখনো ঠিক করে নি। তা যতদিন সেটা ঠিক করতে পারছি না। ততদিন চাকরীটা করলে হত না ? কিছু পয়সা জমাতে পারলে বড় কিছু আরম্ভ করতে একটু সুবিধা হবে।”