পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৪২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মানিক গ্ৰন্থাবলী শান্ত ভাবে ক’দিন ধরে কথা বলে, তখন কি আর দরকার আছে আত হিসেব করে সব কাজ করার ! দু’জনে চলতে থাকে একরকম নির্বাক হ’য়েই। মাঝে মাঝে এ ওর মুখের দিকে তাকায় আড়চোখে । সাত বছর দু’জনের বয়স যেন বিশ বছর বেড়ে গেছে সংসারের চাপে, দুর্ভিক্ষের গত দু’বছরেই যেন বেশী বেড়েছে। ভবিষ্যতে আরও কি আছে ভগবান জানেন । “দরটা সুবিধা হল না।” “উপায় কি ?” “ডাবল দরে এমন জমি মিলবে না ।” “ঠিক । লতিফের সেচা জমির চেয়ে ভাল ফসল দিয়েছে। গতবাৱ৷” গোবৰ্দ্ধন এক গাছতলায় দাড়িয়ে পড়ে । - “শোন বলি, জনা । না বেচলে হয় না জমিটা ? এক কাজ করি আয় । না বেচে বাধা রাখি, পারি তো ছাড়িয়ে নেব দু’জনে शिक्ल ।” ‘চকোক্তি মশায় কি রাজী হবে ? ‘রাজী না হয় তো মধু সা’র কাছে বাধা দেব। নয় তো রাথতলার নিকুঞ্জকে। বেচে দিলে তো গেল জন্মের মত । যদি রাখা যায় !” 曾 গাছতলায় দাড়িয়ে দাড়িয়ে গোবৰ্দ্ধন ও জনাৰ্দন - অনন্ত হাতীর দুই ছেলে, কথাটা বিচার ও বিবেচনা ক’রে দেখতে থাকে । দেখে লোকের মনে হয় যেন আলাপ ক’রছে দু’টি সাঙ্গাৎ । এদিকে জর বাড়তে বাড়তে ফেলনার যায় যায় অবস্থা হয়। দুপুর বেলা। চাচের বেড়া থাকলেও ওপারে সব টের পায় সবাই । সূর্যের মা ইতস্তত করে অনেকক্ষণ, ফিসফিস ক’রে সুৰ্য আর লক্ষ্মীকে জিজ্ঞেস করে কয়েকবার, ‘যাব নাকি ?” তারপর বেলা পড়ে এলে সতীরাণীর বিনুনী কান্না শুনে হঠাৎ মনস্থির করে সাত বছর পরে সূর্যের মা বেড়ার ওপারে যায়, আস্তে আস্তে গিয়ে বসে ফেলনার শিয়রে চাদের মারা পাশে । সন্ধ্যার আগে ফেলনা মারা গেলে মড়া কান্না শুনে এপারের বাকী সকলেও হাজির হয়। ওপারে । সাত বছরে পাঁচবার মড়া কান্না উঠেছে জনার্দনের অংশে, কিন্তু গোবর্ধনের অংশ থেকে বেড়া পেরিয়ে কেউ কখনও আসেনি। সাত বছর পরে আজ বেড়ার দু’দিকের মেয়ের বেড়ার একদিকে হ’য়ে একসঙ্গে। কঁদতে আরম্ভ করে । চাদ শোকের নেশায় পাগলের মত কাণ্ড আরম্ভ করলে সুৰ্য তাকে ধরে রাখে। একটু রাত করে গোবৰ্দ্ধন ও জনাৰ্দন যখন বাড়ী ফেরে তখনও দেখা যায় ওপারের প্রায় সকলেই রয়েছে। এপারে, ওপারের ছেলেমেয়েগুলি ঘুমিয়ে