পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৪২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আজ কাল পরশুর গল্প 8RS বৌটাকে সামনে ধরছে প্ৰমাণ হিসাবে। সঙ্গে দু’জন বাবু আছে তাদের। লালু আর মৰুৱকে তারা কত উপদেশই যে দিয়েছে। স্কুলের ছেলে তারা, এই বয়সে পড়াশোনা ছেড়ে খারাপ কাজে লাগা কি উচিত ? - এমনি বড় বড় কত কথা । “সিগারেট চাইতে ছোকরা বাবুটা রেগে টিং !” লালু আর মকুব খিলখিলিয়ে হাসে। । গজেন চিন্তিত হয়ে ফুলকে নৌকায় রেখে একাই নেমে যায়। অবস্থাটা ভাল না বুঝে মাগীটাকে সঙ্গে করে গায়ের মধ্যে যেতে তার ভরসা হয় না। কেরোসিনতেলের টিনটিা সে সঙ্গে নিয়ে দয়ালের বাড়ী পৌছে দেয়। তখন শেষ দুপুর। বাকী বেলাটা সারা গাঁয়ে ঘুরে গজেন ভড়কে যায়, চটেও যায় । যারা তাকে দেখতে পারত না কোনদিন তাদের কথা বাদ যাক, জিনিষপত্রদিয়ে নানাভাবে সাহায্য করে যে সব দুর্বল অসহায় মানুষের কাছে তার বেশ খাতির জন্মেছিল, তারা ও যেন অনেকে কেমন দূরে সরে গিয়েছে, তাকে ভাল করে আমল দিতে চায় না । ঘোষপাড়ায় ঢুকবার পথে পাডার পাঁচটা ছেলে তার পথ আটকাল, স্পষ্ট বলে দিল পাড়ায় ঢুকলে তার একটি মাত্র আস্ত হাতটা মুচড়ে ভেঙ্গে দেবে । হাত কার ভাঙ্গে আর কার আস্ত থাকে, গজেন তা দেখে নেবে, কিন্তু অবস্থা তো সুবিধাজনক নয় । মদন আমতা আমতা করে আবোল তাবোল কি যেন বকল । তার বোনটা কথাই বলল না। তাদের সঙ্গে 1 মেহের দরজা খুলল না। সন্ধ্যার সময় মন খারাপ করে গজেন নৌকায় ফিরে যায়। দুচোখে তার ঘনিয়ে আসে গভীর বিষাদ । নৌকার গলুই-এ বসে জলের ছলাৎ ছলাৎ শব্দ শুনতে শুনতে এক অজানা দুর্বোধ্য বেদনার রহস্যময় সঞ্চারে তার মন উদাস অবসন্ন হয়ে আসে। বিকৃত উত্তেজনার অবসান ঘটলেই চিরদিন তার এরকম মন কেমন করে । ফুল বলে, “কি গো ভাব লাগলো ?” “ভাবছি। আজি নামা হয় না, নায়ে থাকবে ।” “ও বাবা, ডর লাগবে ।” ‘আমি থাকবো।” "তাতে বুঝি ডর কম ? ফুলের পিপাসা পেয়েছিল। আজ আর নামতে হবে না স্থির হওয়ায় সে বোতল বার করে তৃষ্ণা মেটাবার আয়োজন করে। গজেনকে ডেকে নেয় ছাঁই-এর