পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(S রেজাকি যখন সবে কাপুরের মত উড়ে যেতে আরম্ভ করেছে বাজার থেকে, গৌরের চাঁদকাকা একদিন শতু সা’র দোকানে যায় তার মেয়ে পুটর পায়ের মল সারাতে। ফিরে সে আসে চাপা উত্তেজনা আর মলের বদলে টাকা নিয়ে, কাগজের টাকা অবশ্য । পুটু পো করে কান্না ধরতেই চাদ তার মুখে হাত চাপা দিয়ে চাপা গলায় গর্জাতে থাকে, "চুপ যা চুপ যা, বলছি হারামজাদি। টু’ শব্দটি করবি তো মেরে হাড় গুডিয়ে দেব ।” মেয়ে ভ্যাবা চ্যাক খেয়ে চুপ করলে মুখ থেকে হাত সবিয়ে চাদ শুধোয়, ‘কান্না কিসের শুনি ? পুট বলে, “মল কই মোর ? মল এনে দাও মোকে।” “সারাতে দিলাম যে মল ? পুটু সন্দিগ্ধ ভাবে বলে, “তবে যে বললে মাকে মল বেচে টাকা এনেছ ?” ‘কই বললাম। বলিনি তো, কি বললাম তুই কি শুনলি আবাণীর বেটি।” মেয়ের সন্দেহ উড়িয়ে দেবার জন্যে চাদ জোর করে সম্মেহ কৌতুকের হাসি হাসে, মেয়েকে কাছে টেনে তার মাথা চাপড়ে বলে, ‘পরশু মল এনে দেব তোর, পরশু । হা দ্যাখ মলের রসিদ দিয়েছে শাস্তু স্যা।” পকেট থেকে একটুকরো ছেড়া কাগজ বার করে চাঁদ মেয়েকে দেখায়। তারপর আর বিলম্ব না করে ঢাক ঢকু করে আধঘটি জল খেয়ে যায় পাশের বাড়ীতে কালাচাদের কাছে । কালাচাদের অবস্থা বড় শোচনীয় । ক’বছর আগেও তার অবস্থা এখানকার অনেকের চেয়ে ভাল ছিল, সারাবছর একটি দিনের তরেও বৌ ছেলেমেয়ের তার পেটভরা খাবারের অভাব হয়নি, জোতদার করালী শাসমলের অতি বড় একটা অন্যায় মেনে নিয়ে আপোষ করতে রাজী না হওয়ায় তার হয়ে গেল সর্বনাশ, মামলা মোকদ্দমায় আর একদিন অন্ধকার রাতে অজানা কার লাঠির আঘাতে ডান হাতটা দু’জায়গায় ভেঙ্গে চিরদিনের জন্য পঙ্গু হয়ে যাওয়ায় । কপাল মন্দ হলে যে সবদিক দিয়ে দুর্ভাগ্য ঘনিয়ে আসে তার প্রমাণও কালাচাঁদ পেয়েছে, রোগের বাড়াবাড়িতে। অসুখ বিসুখ আগেও তার সংসারে ছিল, সব সংসারে যেমন থাকে, যার তাল সামলাতে রীতিমত খানিকটা বেগ পেতে হয় শুধু, কিন্তু দিন খারাপ পড়ার সঙ্গে জগতের সব রোগ যেন ভিড় করে আসছে শুধু তারই বাড়ীতে!