পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ခုချိချွံ কেউ শুনছে না, কেউ হাই তুলে তুড়ি দিচ্ছে- মমতার মাথাটা গেল বিগড়ে। রামপালকে সঙ্গে নিয়ে সে গিয়ে সৈরভীর ঘরের দরজা খোলাল। রঙ্গমঞ্চের রাণীর মত জিজ্ঞেস করল, “তোমায় মারছিল সৈারভী ?” হাতের অসহ্য যন্ত্রণায় সৈরভীর মাথাটাও তখন বিগড়ে গেছে। সে কেঁদে ককিয়ে বলল, “একেবারে মেরে ফেলেছে দিদিমণি, মুচড়ে ভেঙ্গে দিয়েছে হাতটা ।” এতকাল মমতা শুধু গুজব শুনেছে যে পুরুষমানুষ মেয়েমানুষকে মারে। সর্বাঙ্গ তার ঝিম ঝিম করছিল, প্ৰাণে উথলে উঠছিল ফুটন্ত প্ৰতিহিংসা, হীরেনকে আঘাত করতে হবে। রামপালকে সে হুকুম দিল, “ওর হাতটা মুচড়ে দাও তো রামপাল। জোরে মুচড়ে দাও।” রম্ভ রামপালের গেঞ্জি ধরে টেনে রেখে বলল, “আপনার মাথা কি খারাপ হয়ে গেছে দিদিমণি ? তুমি এর মধ্যে যেও না।” রামপালের তখন চড়া নেশার অবস্থা । গুমোটের গরমে শুতে গিয়ে মমতা গায়ে জামা রাখে নি। শুধু শাড়ীর আঁচলা সে ভাল করে জড়াতেও জানে না গায়ে। বিহবল উদভ্ৰান্ত চোখে রামপাল তার অদ্ধ অনাবৃত পিঠ আর বাহুর দিকে তাকিরে থাকে । r মমতা প্ৰায় আর্তনাদ করে ওঠে : ‘ওর হাতটা মুচড়ে দিলে না। রামপাল ? KRI | VVS 9 NE8 e ?” বঁ হাতে রামপাল একটু ঠেলে দেয় রম্ভাকে, রম্ভ পাচ হাত পিছু হটে যায়। এগিয়ে গিয়ে রামপাল সৈারভীর স্বামীর হাতটা ধরে মুচড়ে দেয়। মট করে হাতটা ভেঙ্গে যায়। হাঙ্গামার হদিশ পেয়ে অনেকেই ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এসে জমা হয়েছিল দুয়ারের কাছে। সৈারভীর স্বামীর হাত ভাঙ্গার শব্দটা শুনতে পায় সকলেই। স্বামীর গগনভেদী আর্তনাদে বোধ হয় জ্ঞান ফিয়ে আসে সৈারভীর। বোধ হয় তার মনে পড়ে যায় যে এই লোকটা তাকে খাওয়ায় পরায়-ভাল রোজগার করে, ভাল খাওয়ায় পর্যায়, সোহাগ করে, ভালবাসে-কষ্টের মাঝে শুধু একটু মারে। ঝড়ের মত ছুটে এসে স্বেচ্ছায় সে মমতাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়, কামড় বসায় রামপালের হাতে। তারপর আরম্ভ করে আহত স্বামীকে বুকে আগলে নিয়ে হৈ চৈ হা-হুতাশ। মেঝে থেকে উঠতে উঠতে তাদের দুজনকে এভাবে একান্ত কাছাকাছি দেখে মমতা ই করে তাকিয়ে থাকে। চোখের পলকে সমস্ত ব্যাপারটা তার কাছে গোপাল ভাড়ীয় কমিকে পরিণত হয়ে যায়। লম্বা চওড়া স্থূলকায়া সৈারভীর পাশে এমন বেঁটে রোগা ক্ষীণকায় দেখায় তার স্বামীকে ! SWD ,