পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মানিক গ্ৰন্থাবলী আসিয়াছিল, থার্ড এনক্লোজারে। ঘোড়ার দৌড়ানোর চেয়ে বেশী আগ্রহের সঙ্গে দেখিয়াছিল মানুষগুলিকে । রেসকোসের বাহিরের জগৎ সকলের কাছে লুপ্ত হইয়া গিয়াছে। ঘোড়া, জকি, ট্ৰেণার, পজিসন, রেকর্ড এসব ছাড়া জীবনে ও চেতনায় আবে কোন কিছুর স্থান নাই । ভিড়ের মধ্যে পরস্পরের গায়ে ক্ৰমাগত ধাক্কা লাগিতেছে, তবু প্ৰত্যেকে তারা একা । যে যার নিজের হিসাবে মশগুল, কাবো দিকে তাকানাের অবসর নাই । ঘোড়া দৌড়াইবার সময় যতই ঘনাইয়া আসে তত উত্তেজন| বাড়ে, আনন্দের নেশা চরমে উঠিতে থাকে। কোন ঘোড়ার উপর ঢাকা লাগানে ধ্যায়, সামান্য সম্বলের কয়েকটি টাকা ? অনেক হিসাব করিয়া বন্ধু দু’নম্বর ঘোড়াটি বাছিয়া টিকিট কিনিতে পা বাডাইয়াছে, পাশ দিয়৷ কে যেন সঙ্গীকে বলিতে বলিতে চলিয়া গেল, পাচ নম্বর সিউর, ও ঘোড়াকে মারবে কে ? বন্ধু অমনি পাচ নম্বরের টিকিট কিনিতে ছুটিল। যে বাসে তারা আসিয়াছিল তার নম্বর ছিল ২২২, বন্ধু তাই নিঃসন্দেহ হইয়া গিয়াছিল সেদিন দু’ নম্বরের ঘোড়া জিতিবে। পর পর দু’টি রেসে হারিয়া সে বিশ্বাস ভাঙ্গিয়া গিয়াছিল। ঘোড়া ছুটিতে আরম্ভ করিলে চীৎকার শুরু হয়, ঘোড়াগুলি যখন সামনে আসে, মনে হয় এতগুলি মানুষের ফুসফুস যেন ফাটিয়া যাইবে । কিছু লোক শব্দ করে না, দাত দিয়া জোরে ঠোট কামড়াইয়া থাকে, কেউ চোখ বুজিয়া বিড়বিড় করিম। দেবতাকে দোহাই জানায় । সেদিন মোহনের সব চেয়ে বিস্ময়কর মনে হইয়াছিল, সকলের দুর্ভাগ্যকে স্বীকার করিয়া নেওয়ার প্রক্রিয়া। বাজীর ফলাফল টাঙ্গাইয়া দেওয়ামাত্র একটুক্ষণের জন্য হয়তো মুখে প্ৰত্যাশার জ্যোতি নিভিয়া যায়, তারপর রেস-বুকের পাতা উন্টাইয়া পরের বাজীতে মন দেয়। এত আশা, এত উত্তেজনা যে বাজীটিকে কেন্দ্ৰ করিয়া গড়িয়া উঠিয়াছিল তার গুরুত্ব এখন মিথ্যা, ফলাফল অর্থহীন ; কোন ঘোড়া জিতিয়াছে কোন ঘোড়া জেতে নাই কি তাতে আসিয়া যায় ? এবার যে বাজী আছে তাই নিয়া এখন মাথা ঘামাও । জীবন যুদ্ধেও কি মানুষ অতীতের হারজিত তুচ্ছ করিয়া ভবিষ্যতে মশগুল হইয়া থাকে না ? বন্ধুর সঙ্গে রেস দেখিতে আসিয়া সেদিনও মোহন এই কথা N)