পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সহরবাসের ইতিকথা সহর থেকে দূরে ছিলে বলেই বোধ হয় তুমি আমার একমাত্র বন্ধু আছে-খাটি বন্ধু আছে।” মোহন চমৎকৃত হইয়া যায়, অভিভূত হইয়া যায়। সন্ধ্যার সে একমাত্র বন্ধু —খাটি বন্ধু ! সন্ধ্যা ভালবাসায় বিশ্বাস করে না, কিন্তু বন্ধুত্বে বিশ্বাস করে। সে ছাড়া সন্ধ্যার বিশ্বাসী খাটি বন্ধু একজনও নাই। সন্ধ্যা নিজেই একটা প্ৰস্তাব করে। মোহনকে বাড়ীর সামনে নামাইয়া দিয়া সন্ধ্যা গাড়ী নিয়া ব্যারাকপুর চলিয়া যাইবে, পরদিন গাড়ী ফিরত দিতে আসিবে, লাবণ্যের সঙ্গেও দেখা করিয়া যাইবে । “তোমার তো লাইসেন্স নেই।” ‘তাতে কি ? পুলিশ কি ওৎ পেতে আছে!” চিন্ময়ের মধ্যস্থত ছাড়াও মোহনের সামাজিক জীবনের পরিধি বাড়িতে লাগিল। চিন্ময় কয়েকজনের সঙ্গে পরিচয় করাইয়া দিয়াছিল, জগদানন্দ কয়েকজনের সঙ্গে করাইয়া দিয়াছে, সন্ধ্য আরও কয়েকজনের সঙ্গে দিল। এই পরিচিতেরা আবার যোগাযোগ ঘটাইয়া দিল নতুন মানুষের সঙ্গে । নিমন্ত্রণ আসিতে লাগিল হরদম, বাড়ীতেও মানুষের পদার্পণ ঘটতে লাগিল প্ৰতিদিন । । একদিন মোহন মস্ত একটা উৎসবের আয়োজন করিল। সেদিন তার বাড়ীর এক গেট দিয়া একত্রিশখন গাড়ী ঢুকিয়া আরেক গেট দিয়া বাহির হইয়া গেল, মেয়েদের দামী দামী বিচিত্র শাড়ীতে বাড়ীটা ঝলমল করিতে লাগিল । পুরুষ ও নারীর এই ভীড়ের মধ্যে সেদিন মুখোমুখি দেখা হইয়া গেল চিন্ময় s 开丽叶可旧 দেখা যে হইবে দুজনেরি তা জানা ছিল—না জানাইয়া তাদের ডাকিতে মোহনের ভরসা হয় নাই। যারা দুজনের পৃথক বাস করার খবর জানিত তাদের কৌতুহলী দৃষ্টির সামনে কিছুক্ষণ কথা বলিয়া সেই যে তারা তফাতে সরিয়া গেল, পরস্পরের দিকে আর তার চাহিয়াও দেখিল না । মোহন শুধু বুঝিতে পারিল ওটা তাদের শুধু লোক দেখানো আলাপ নয়, পরস্পরকেও তাদের জানাইয়া দেওয়া প্রয়োজন হইয়াছিল যে বিদ্বেষ তাদের নাই। VRS * *(e)