পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সহরবাসের ইতিকথা ব্যাকুলতা দেখা দিয়াছে। এতদিন সে আছে, যার থাকা অথবা যাওয়ার কথা এতদিন সে একবার চিন্তাও করে নাই, এখন আরও পনেরটা দিন সে থাকিবে ভাবিলেই তার অস্বস্তির সীমা থাকিতেছে না। সারাদিন মোহন এই কথাটাই মনে মনে নাডা। চাড়া করিল, রাত্ৰে পীতাম্বর ফিরিলেই তাকে জানাইয়া দিবে। কিনা, কাল পবশুর মধ্যেই তার যাওয়া চাই। তারপর রাত দশটার সময় খোজ নিতে গেল পীতাম্বর ফিরিয়াছে কিনা । শ্ৰীপতি ভয়ে ভয়ে জানাইল, পীতাম্বর তার যা কিছু ছিল পুটলী বাধিয়া সকালেই চলিয়া গিয়াছে। ‘উনি কি কবেছেন বাবু? “কিছু করেনি।” একবার বলিয়া গেল না ? এত তেজ পীতাম্ববের ? এতদিন তার আশ্রয়ে থাকিতে পারিল, তার অন্ন ধ্বংস কবিতে পারিল, যাওয়ার সময় একবাব বিদায় নিয়া যাইতে পারিল না ? বলা মাত্র গটগট করিয়া বাহির হইয়া গেল ? এরকম অক্লীতজ্ঞই হয় বটে। এসব অপদার্থ মানুষ । পীতাম্বব কিছু ফেলিয়া যায় নাই, কাগজের একটি টুকরাও নয়। ফেলিয়া যাওয়ার কিছুষ্ট তার ছিল না। কোন চিহ্নই সে রাখিয়া যায় নাই । যে স্থানটুকু মাত্র কয়েকমাস সে দখল করিয়াছিল সেদিকে চাহিয়৷ শ্ৰীপতির বুক অনিশ্চিত আশঙ্কায় দুৰ্ব্ব দুরু করে। কে জানে মোহন কবে তাকেও দূর করিয়া দিবে। থাক। আর খাওয়াব জন্য পয়সা খরচ করিতে হইলে কদমকে তার আর টাকা পাঠানো হইবে না, দুটি চারটি টাকার বেশী নয়। কদমের মুখের হাসি মিলাইয়া যাইবে, একটু নিৰ্ভাবনায় থাকিয়া আর পেটে দুটো খাইয়া তার চেহারায় যে জলুষ আসিয়াছে তার চিহ্ন থাকিবে না, ম-মরা ছেলেমেয়েগুলিকে খুশী মনে আদর যত্ন করার বদলে আবার গায়ের জালায় দিশা হারাইয়া তিন হাতাড়ি পিটাইতে আরম্ভ করিবে । না, আর দেরী করা নয় । আয় বাডানোর জন্য কোমর বঁাধিয়া এবার উঠিয়া পড়িয়া লাগিতে হইবে। VVD