পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সহরবাসের ইতিকথা তাকে বাদ দিয়া ওরা শুধু পরামর্শ করে না, আজকাল তার কাছে ঘোষিতে চায় না, কাছে ডাকিলে অস্বস্তি বােধ করে। দূর হহঁতে নীরবে তার দিকে তাকাইতে শিখিয়াছে। ওদের চােখে ভীত সন্দিগ্ধ দৃষ্টিই সে আবিষ্কার করে, খোকাথুকীর চোখে পৰ্য্যন্ত । নগেনের সঙ্গে মারি অফুরন্ত আলোচনা ওদের কানেও যায়। মোহন কতদিন দেখিয়াছে খেলার সময় খেলা ফেলিয়া খোকাখুকী মা’র গা ঘোষিয়া দু’চোখ বড করিয়া মা আর ছোড়দার কথা শুনিতেছে। বুঝিতে না পারুক, শুনিতে শুনিতে ধারণা গড়িয়া ওঠে। দাদাকে কেন্দ্ৰ করিয়া এক ঘনায়মান দুৰ্বোধ্য বিপদের ভয় খোকা খুকীর মনে সঞ্চিত হইতে থাকে। নলিনী দাদাকে খুব ভালবাসিত । তার সঙ্গেই মোহনের ঘনিষ্টতা ছিল বেশী। নগেন ছিল ভাই, খোকা খুকী ছিল ছোট, নলিনী তাই সব টুকিটাকি কাজ করিত মোহনের, এটা আনা, ওটা ধরা, সেটা খোজা, এর কাছে ওর কাছে তার নির্দেশ বহন করা । সে ও ভয় করিতে শিখিযাছে, তবে ভয়টা বোধ হয় তার অবুঝ নয়, তের বছরেব মেয়ে অনেক কিছু বুঝিতে শেখে। তাই, দু’চার দিন বাহিরের জীবনের ব্যস্ততায় মোহন তাকে ভুলিয়া থাকিলে সেও বিগড়াইয়া যায় বটে, অল্প চেষ্টাতেই বোনের মনকে মোহন আবার হাল্কা করিয়া দিতে পারে । এখনো পারে । প্রথমটা নলিনী একটু আড়ষ্ট হইয়া থাকে। নূতন করিয়া যেন বিচার করে যে দাদা তার কেমন মানুষ, যেন ভাবিয়া পায় না। দাদার সঙ্গে আবার ভাব করা উচিত। কিনা ৷ R “তোর চুলটা হঠাৎ এত লম্বা হল কি কবে রে!” “কই ? “এই যে বিনুনীটি এক হাত দেড় হাত বেড়ে গেছে ?” “এক হাত দেড়হাত কখনো বাড়ে ? চার পাঁচ আঙ্গুল ।” ‘রোজ তোর চুল চার পাঁচ আঙ্গুল বাডে নাকি ?” তখন হাসি মুখে নলিনী বিনুনীর ডগাটা দাদার সামনে মেলিয়া ধরে, বিনুনী লম্বা করার কৃত্রিম উপায়টা ব্যাখ্যা করিয়া বুঝাইয়া দেয়। সে তখন একেবারে ভুলিয়া যায় দাদার বিরুদ্ধে শোনা রাশি রাশি অভিযোগ, মোহন । OIO