পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Coto তার মানসিক উন্নতির সাহায্য করে। জগত ও যে শুধু স্কুলের পড়ার মধ্যে নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখেনি, চারুর মানসিক উন্নতির জন্য তাকে অনেক বিষয়ে অতিরিক্ত জ্ঞান সরবরাহ করছে, নীরদের তা জানা ছিল না । সে যখন মাঝে মাঝে জগতের পড়ানো শুনতে ঘরে গিয়ে বসে জগৎ তখন মধ্যযুগের ব্ল্যাক ডেথের কাহিনী বন্ধ রেখে চারুকে ইংরেজি গ্রামার শেখায়, অঙ্ক বুঝিয়ে দেয়। চারুকে বাড়তি জ্ঞান এবং আদর্শ ও উপদেশ সরবরাহের ভারটা তাই নীরদ নিজেই গ্ৰহণ করেছে। চারু বুঝতে পারে, জগতের তুলনায় তার বাপের জ্ঞানভাণ্ডার বড়ই সংকীর্ণ, অনেক বিষয়েই জগতের মতো তার স্পষ্ট ধারণা নেই এবং কোনো বিষয়েই সে জগতের মতো সহজ ও স্পষ্ট ভাবে বুঝিয়ে বলতে পারে না। জগতের বিরুদ্ধে চারুর মনে একটা প্ৰবল নালিশ জাগে । সে যেন তার বাবাকে অপদস্থ করছে, অবজ্ঞা করছে। সময় সময় মনের রাগ সে সামলাতে পারে না । কথা নেই বার্তা নেই হঠাৎ খাপছাড়া মন্তব্য করে বসে, “আপনার চেয়ে বাবা ঢের বেশি জানেন । কত পড়েছেন। বাবা ” ‘জানেন বৈকি। আমি আর কতটুকু জানি বল ? বই কেনার পয়সা নেই, চেয়ে চিন্তে ধার করে পড়তে হয়, কত কষ্টে যে আমি লেখাপড়া শিখেছি, তুমি ভাবতেও পারবে না চারু।” তা ঠিক । রাগ উপে গিয়ে চারুর মন সমবেদনায় ভরে যায়। সে ভাবে, জানুকগে জগত তার বাবার চেয়ে অনেক বেশি, আর তো কিছুই নেই। ওর তার বাবার মতো ! চাকরি নেই, পয়সা নেই, বাড়ি ঘর নেই, আপনার লোক নেই, কিছুই নেই ! চারুকে হাফ ইয়ারলি পরীক্ষার সবগুলি সাবজেক্ট পাশ করিয়ে জগত নিজেও লেখাপড়া শেখার চরম পরীক্ষায় পাশ করে ফেলল, চাকরি সে একটা পেয়ে গেল চমৎকার। নীরদকে খবরটা জানিয়ে মাথা নিচু করে সে বলল, “এতদিন আপনাকে বলবার মুখ ছিল না, বলতে সাহস পাই নি। আজ একটা কথা আপনাকে জানাতে চাই ।” কথাটা শুনে নীরদ চমকে গেল। ‘তুমি! তোমার মধ্যে এসব আছে তা তো জানতাম না বাপু !' জগত আশ্চৰ্য হয়ে বলল, “আজ্ঞে, দুশো টাকায় ষ্টার্ট পেয়েছি-? 8.