পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বামী-স্ত্রী নির্জন, একজোড়া চোখও যেন ঘরে নেই। তিনমাস বাপের বাড়িতে কাটিয়ে সাতদিন আগে এখানে এসেছে। প্ৰথম দিন এভাবে হাওয়া খেতে পারে নি। ছি, লাজ করে না মানুষের !! একদেহ, একমন, একপ্ৰাণ যারা, তিন মাসের ছাড়াছাড়ি তাদের এমনি করে দেয়, দেখা হওয়ামাত্র চটু করে এক হয়ে যেতে পারে না । তিনমাস তারা পরস্পরকে কল্পনা করেছে, কামনা করেছে, ব্যথা আর ব্যৰ্থতার নিশ্বাস ফেলেছে, মুক্তির আস্বাদ আর স্বাধীনতার গৌরবে আনন্দ অনুভব করেছে শাস্তির মতো, রাত জেগেছে, আবেগের চাপে সময় সময় দম যেন আটকে এসেছে কয়েক মুহুর্তের জন্য। কত অভিনব পরিবর্তন ঘটেছে দুজনের মনেই দুজনের। দেখা হবার পর আবার একন্দেহ, একমন, একপ্ৰাণ হতে খিল দেওয়া ঘরে একটা রাতের, অন্ততঃ আধখান বা সিকিখানা রাতের, সময় লাগবে বৈকি। যন্ত্রের পার্টস খুলে আবার ফিট করতে পর্যন্ত সময় লাগে-বিধাতা মিস্ত্রী হলেও লাগে। শরীরের ঘাম শুকিয়ে গেলে মেনকা পুবের দুটি পর্দা লাগানো জানালার একটিতে গিয়ে দাঁড়াল। পাশের একতলা বাড়ির ছাতে গরম জ্যোৎসার ছড়াছড়ি । তার পরের তেতালা বাড়ির সাতটা জানাল দিয়ে ঘরের আলে| বাইরে আসছে। আজকাল কখন সবগুলি জানালার আলো নেভে কে জানে । বিয়ের পর কিছুদিন এ-খবরটা সে জানত। চারটে জানালা অন্ধকার হত প্ৰায় এগারটায়, দুটি হত বারটার কাছাকাছি, আর তেতালার কোণের জানালাটি নিভতে রাত দেড়টা দুটোর সময়। ওই ঘরটিতে কে বা কারা থাকে। তাই নিয়ে সে কত কল্পনাই করেছে। অন্য সম্ভবপর কল্পনাগুলি তার মনে আমল পেত না, পরীক্ষার পড়া করতে ও ঘরে কাউকে রাত জগতে দিতে সে রাজী ছিল না, তার কেমন বিশ্বাস জন্মে গিয়েছিল তেতালার ওই কোণের ঘরটিতে তাদের মতো এক দম্পতি থাকে, বিয়ে যাদের হয়েছে অল্পদিন । তাদের মতো ভালোবাসতে বাসতে কখন রাত দুটাে বেজে যায়। ওদেরও খেয়াল থাকে না। তারা অবশ্য আলো নিভিয়ে দেয় অনেক আগেই। বাড়ির ভেতরের দিকে তাদের জানালাটি শুধু ঘষা সার্সির, ঘরের মধ্যে নজর চলে না। কিন্তু আলো জলছে কিনা জানা যায়। ওদের তেতালার কোণের ঘরটিতে হয়তো আলো জালিয়ে রাখার অসুবিধা নেই। বাপের বাড়ি থেকে ফিরে আসবার দিন তারা প্ৰায় রাত তিনটে পৰ্যন্ত জেগে ছিল। কিন্তু সেদিন ও বাড়ির জানালার দিকে তাকাতে খেয়ালও হয় নি। মেনকা আপন মনে আপসোসের অক্ষুট আওয়াজ করল। সে রাত্রে বড় বডা R 8