পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ব-নির্বাচিত গল্প.pdf/১৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SV8 द्रथ ठळक মোরা বলতে যাইনি। ঠাকুরবাবু ভালোমন্দ। যা বলি তাতেই ওঁতো। বলাবলি করেছি নিজেদের মধ্যে । তোমার তাতে কি ?” ‘নে নে মোট তোেল।” গৌতম বলে খুশী হয়ে, “চটস কেন ? আটআনা বেশী পাবি আজ, যা।” রাঘব নিঃশব্দে বেঁচেকা মাথায় তুলে নেয়, গৌতমের সাহায্যে। গৌতম তাকে ছেদো দর্শনের কথা শোনায়, যে কথা শুনিয়ে শুনিয়ে মেরে রাখা হয়েছে। কোটি গৌতমকে বহুকাল ধরে : কি ভাবে ভালো থেকে মরলে লাভ, আর কি অভাবে খারাপ হয়ে বঁাচলে লোকসান। তেজী গলায় গৌতম কথা কয়। শুনে গলা বন্ধ হয়ে আসে রাঘবের। মন তার মাথা কুটে বলে, হায় কি করিছি, হায় কি করিছি। ! পরের গায়ে রাঘবের ঘর, ফুলবাড়ি আর মালদিয়ার প্রায় মাঝামাঝি । এটাকে মোটামুটি গা বলা যায়। খানিত্রিশেক ঘর আছে, আসল পথের সমান চওড়া পথ আছে গা পর্যন্ত সাত আট রাশি, নামও আছে গায়ের-পত্তি। এইটুকু এসে রাঘব বেঁচেকা নামিয়ে রাখে। আঙুল দিয়ে শুধু কপালের ঘাম ঝেড়ে ফেলে খ্যান্ত হয় না, বেঁচেকার ওপর চেপে ব’সে বেশ আনন্দ অন্তরঙ্গতার সুরে বলে, ‘একটা বিড়ি দেন গো ঠাকুররাবু!” সাত আট রশি দূরে খানিত্রিশেক ঘরের নামওয়ালা বস্তি-ৰ্গা, এটাও যেন খানিক আগের দশ-কুঁড়ে গা-টার মতো নিঃশব্দ, জনহীন, মৃত । উলঙ্গ ছেলেমেয়ে পর্যন্ত ছুটে আসে না পয়সা ভিক্ষা করতে, পথ দিয়ে পথিক কেউ যাচ্ছে কি যাচ্ছে না তাতে যেন কিছু এসে যায় না। তাদের। পত্তি গায়ের দক্ষিণে ঘন জঙ্গল, নিচু জমিতে বছরে ছ’মাস বর্ষার জল জমে থাকলে শোভাহীন বর্ণহীন বীভৎস জলজ জঙ্গল জন্মে। ঝিল্লীর ডাকে সন্ধ্যার স্তব্ধতা, অন্ধকার রাত্রির ইঙ্গিত, এখনো সন্ধ্যা নামেনি। বাইরে সন্ধ্যা না নামলেও ঘরগুলির ভিতরে যে গাঢ় অন্ধকার ঘনিয়েছে রাঘব তা জানে! গৌতমও জানে! এ অঞ্চলেরই মানুষ ত সে। রাঘবকে ধমক দিতে গিয়ে হঠাৎ শিশুর কান্না কানে আসায় গৌতম চমকে উঠে থেমে যায়। কে যেন চাপা দিয়েছে শিশুটির মুখে। গা ছমছম করে গৌতমের। এই জলাজঙ্গল, কুঁড়ে পথ আর এই গামছা-পরা মানুষ এসব পুরনো সবকিছু যেন নতুন নতুন মনে হয়, গায়ের শব্দহীন স্তব্ধতায়, মানুষের সাদৃশ্যে, শিশুর কান্নার মুখ-চাপায়, বেঁচেকায় বসবার ভঙ্গীতে। o AfT Trisvijska o