পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/১১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in জননী SSS) দশ বকুলের একটি মেয়ে হইযাছে। প্রথমবারেই মেয়ে ? তা হোক! শ্যামার শেষবারের মেযেব মতো ও তো অন্ধ হইয়া জন্মায নাই, বকুলের চেয়েও ওর বুঝি চোখদুটি ডাগর! কাজল দিতে দিতে ওই চোখ যখন গভীব কালো হইয়া আসিবে দেখিয়া অবাক মানিবে মানুষ। কী আসিয়া যাস প্রথমবার মেয়ে হইলে, মেয়ে যদি এমন ফুটফুটে হয়, এমন অপবৃপ চোখ যদি তার থাকে ? শ্যামাব একটু ঈর্ষা হইয়াছিল। বইকী! বকুলের মেয়ের চোখ আশ্চর্য সুন্দব হোক শ্যামাব তাতে আনন্দ, আহা তাব মেয়েটির চোখ দুটি যদি অন্ধ না হইত! বকুলের মেয়ে মানুষ কবে শ্যামা, প্রসবের পর বকুলের শবীরটা ভালো যাইতেছে না, তা ছাড়া সন্তানপরিচর্যাব সে কী জানে ? নিজেব মেযে, বকুল আব্ব বকুলের মেয়ে, শ্যামা তিনজনেরই সেবা করে। বকুলেব মেযে আব্ব নিজের মেয়েকে হয়তো সে কোনোদিন কাছাকাছি শোয়াইয়া রাখে, বকুলের মেয়ে তাকায় বডো-বড়ো চোখ মেলিয়া, শ্যামার মেয়ের অন্ধ আঁখিদুটিতে পালকও পডে না, --পলক পড়িবে কীসে, চোখের পাতা যে মেযেটাব জড়ানো! শ্যামার মােন পড়ে বাদুৰ কথা-—মন্দার সেই হাবা মেয়েটা, দিনবাত যে শুধু লালা ফেলিত। এমন সন্তান কেন হয় মানুষেব,—অন্ধ, বোবা, অঙ্গহীন, বিকল ? কেন এই অভিশাপ মানুযেব ? এক একবার শ্যামাব মনে হয়, হয়তো বকুলের মেয়ে তাব মেয়েব চোখ দুটি হরণ কবিয়াছিল। তাই ওব ডবল চোখের মতো অতবড়ো চোখ হইয়াছে! তারপর সবিষাদে শ্যামা মাথা নাডে। না, এ সব অন্যাস্য কথা মনে আনা উচিত নয়। কীসে কী হইয়াছে কে তা জানে, সত্যমিথ্যা কিছু তো জানিবােব উপায় নাই, আবোলতাবোেল যা তা ভাবিলে বকুলেব মেযোিব চোখ দুটিব। যদি কিছু হয়। প্রথম সন্তান বকুলের, বডো সে আঘাত পাইবে। মেযেব দু মাস বয়স কবিয়া বকুল শ্বশ্বববাডি গেল। যাওযাব আগে কী কান্নাই যে বকুল কঁাদিল । বলিল, চেহাবা তোমাব বডড খারাপ হযেছে মা, এবার তাকাও একটু শবীরের দিকে, এখনও এত খাটুনি তোমাব সাইলে কেন এ শরীরে? বিয়ে দিযে বউ আনো এ গানৰ দাদাব, সাবাজীবন তো প্ৰাণ দিযে কবলে সকলোেব জন্যে এবার যদি না একটু সুখ কবে নোবে— বলিল, আমাক যেমন কপাল! সেবা নিয়েই চললাম, তোমার কাছে থেকে একটু যে যত্ন করব टों दcil (मई ! কী গিমিই বকুল হইয়াছে! ছাঁচে-ঢালা হইযা আসিতেছে তাহার চালচলন, কথােব ধবন । যেন দ্বিতীয় শ্যামা। শীতকাল। বকুল শ্বশ্বববাড়ি গেল শীতকালে। শীতে সংসারের কাজ কবিতে এ বছব শ্যামার সত্যই যেন কষ্ট হইতে লাগিল। ছেলেকে আপিসেব ভাত দিতে হয, শীতের সকাল দেখিতে দেখিতে বেলা হইয়া যায়, খুব ভোবে উঠিতে হয় শ্যামার। আগুনের আঁচে রান্না কবিয়া আসিযা রাত্রে লেপের নীচে গা যেন শ্যামার গরম হইতে চায। বা, যত সে জড়সড হইয়া শোয় হাতে পায়ে কেমন একটা মোচড় দেওয়া ব্যথা জাগে, কেমন একটা কষ্ট হয় তাহার। ভোরে এই কষ্ট দেহে লইয়া সে লেপের বাহিরে আসে, আঁচল গায়ে জড়াইয়া হিহি। করিয়া কঁাপিতে কঁাপিতে নীচে যায, ঠিকা ঝি আসিবে বেলায়, তার আগে কিছু কিছু কাজ শ্যামাকে আগাইয়া রাখিতে হয়। বিধান বাহিরেব ঘরে শোয়। ঝি আসিয়া ডাকাডাকি করিলে তাহার ঘুম ভাঙিয়া যায়—শ্যামা তাই আগে সন্তপণে সদর দরজাটা খুলিয়া রাখিয়া অ’সে। ঘুম সে ভাঙায় মণির। মণির পরীক্ষণ আসিতেছে, নীচের যে ঘরে আগে শ্যামা সকলকে লইয়া থাকিত, সেই ঘরে মণি একা থাকে—পড়াশোনা করে, ঘুমায়। ভোরভোর মানিক ১ম-৮