পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/১৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in YVS)O মানিক রচনাসমগ্ৰ আমি ভেতরে ঢুকতে তিনি দরজা বন্ধ করলেন। সদর দরজা থেকে দু-ধারের দেয়ালে গা ঠেকিয়ে হাত পাঁচেক এসে একটা হাত তিনেক চওড়া বারান্দায় পড়ে ডান দিকে বঁাকতে হল। বঁদিকে বাঁকবার জো নেই, কারণ দেখা গেল সেদিকটা প্রাচীর দিয়ে বন্ধ করা। ছোট্ট একটু উঠান, বেশ পরিষ্কার। প্রত্যেক উঠানের চারটে করে পাশ থাকে, এটারও তাই আছে দেখলাম। দুপাশে দুখানা ঘর, এ বাড়িরই অঙ্গ। একটা দিক প্রাচীর দিয়ে বন্ধ করা, অপর দিকে অনা এক বাড়ির একটা ঘরের পেছন দিক জানালা দরজার চিহ্নমাত্র নেই, প্রাচীবেরই শামিল। আমার নবলব্ধ মামা ডাকলেন, অতসী, আমার ভাগনে এসেছে, এ ঘরে একটা মাদুর বিছিয়ে দিয়ে য়াও। ও ঘরটা বড়ো অন্ধকার। এ—ঘর মানে আমবা যে ঘরের সামনে দাঁড়িয়েছিলাম। ও-ঘর মানে ওদিককার ঘরটা। সেই ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন এক তরুণী, মস্ত ঘোমটায় মুখ ঢেকে। যতীন মামা বললেন, এ কী! ঘোমটা কেন ? আরে, এ যে ভাগনে! মামির ঘোমটা ঘুচবার লক্ষণ নেই দেখে আবার বললেন, ছি ছি, মামি হয়ে ভাগনের কাছে ঘোমটা টেনে কলাবউ সাজবে ? এবার মামির ঘোমটা উঠল। দেখলাম, আমার নতুন পাওয়া মামিট মামারই উপযুক্ত স্ত্রী বটে। মামি এ—ঘরের মেঝেতে মাদুর বিছিয়ে দিলেন। ঘরে তক্তপোশ, টেবিল, চেয়ার ইত্যাদির বালাই নেই। একপাশে একটা রং-চটা ট্রাঙ্ক আর একটা কাঠের ব্যাকসো। দেয়ালে এক কোণ থেকে আর এক কোণ পর্যন্ত একটা দড়ি টাঙানো, তাতে একটি মাত্র ধুতি ঝুলছে। একটা পেরেকে একটা আধ ময়লা খন্দরের পাঞ্জাবি লটকানো, যতীন মামার সম্পত্তি। গোটা দুই দু-বছব আগেকার ক্যালেন্ডারেব ছবি। একটাতে এখনও চৈত্রমাসেব তারিখ লেখা কাগজটা লাগানো রয়েছে, ছিড়ে ফেলুতে বোধ হয় কারও খেয়াল হয়নি। যতীন মামা বললেন, একটু সুজিটুজি থাকে তো ভাগনেকে কবে দাও। না থাকে এক কাপ চাই থাকেখন । বললাম, কিছু দরকার নেই। যতীন মামা। আপনার বাঁশি শুনতে এসেছি, বাঁশির সুরেই খিদে মিটবে এখন। যদিও খিদে পায়নি মোটেই, বাড়ি থেকে খেয়ে এসেছি। যতীন মামা বললেন, বাঁশি ? বাঁশি তো এখন আমি বাজাই না। বললাম, সে হবে না, আপনাকে শোনাতেই হবে। বললেন, তা হলে বসে, রাত্ৰি হােক। সন্ধ্যার পর ছাড়া আমি বঁশি ছুই না। বললাম, কেন ? যতীন মামা মাথা নেড়ে বললেন, কেন জানি না ভাগনে, দিনের বেল বঁশি বাজাতে পারি না। আজ পর্যন্ত কোনোদিন বাজাইনি। হঁহ গা অতসী, বাজিয়েছি? অতসী মামি মৃদু হেসে বললেন, না। যেন প্রকাণ্ড একটা সমস্যার সমাধান হয়ে গেল এমনিভাবে যতীন মামা বললেন, তবে ? বললাম, মোট পাঁচটা বেজেছে, সন্ধ্যা হবে সাতটায়। এতক্ষণ বসে থেকে কেন আপনাদের অসুবিধা করব, ঘুরে-স্টুরে সন্ধ্যার পর আসব এখন। যতীন মামা ইংরেজিতে বললেন, Tut ! Tut ! তারপর বাংলায় যোগ দিলেন, কী যে বল ভাগনে! অসুবিধেটা কী হে আঁ্যা! পাড়ার লোকে তো বয়কট করেছে অপবাদ দিয়ে, তুমি থাকলে তবু কথা কয়ে বাঁচিব।