পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/১৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang laboOokS. in অতসী মামি S8. নেকি পুলককে কাছে টেনে নিয়ে কী বলতেই সে আনন্দে হাততালি দিয়ে উঠল। নেকিব হাত থেকে গামছােটা টেনে নিয়ে বললে, তুমি যাও দাদা, আমি যাব না। নেকিন্দিব সঙ্গে সাঁতার কাটিব। বেড়াতে যাবি না ? পুলক ঘাড় নেড়ে বললে, রোজ তো বেড়াই, আজ সাঁতার দেব। তুমিও এস না দাদা, তিনজনে সুইমিং রেস দেব, নেকিন্দির সঙ্গে পারবে না তুমি। অশোক ধমক দিয়ে বললে, এই অবেলায় পচা ডোবায় স্নান করলে অসুখ হবে পুলক। এখন বেডিযে আসি, কাল সকালে বড়ো পুকুরে সাঁতার কাটল। পুকুরের ছােটাে-বড়োত্বের জন্য পুলকের মাথা ব্যথা ছিল না, নেকিন্দির সঙ্গে সাঁতাব দিতে পেলেই সে সুখী। নেকির গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে তার একটা হাত চেপে ধবে দাদার প্রস্তাবে প্রবল আপত্তি জানিয়ে দিল। নেকি তার হাত ধরে পুকুরের দিকে অগ্রসর হল। অশোক কুদ্ধ হয়ে বললে, এই অবেলায় ওকে যে পচা ডোবাঘ স্নান করবার জন্যে নাচালেন, অসুখ হলে দায়ি হবে কে ? মুখ না ফিরিয়ে নেকি জবাব দিল, আমি। ওর অভ্যাস আছে। অভ্যাস আছে কী বকম ? ও কি গেয়ো ভুত যে পচা ডোবায স্নান করা অভ্যাস থাকবে ? গোযো ভূত না হোক, শকুবে বাবু নয়। বলে নেকি পুলককে নিয়ে মোটা আমগাছটািব ওদিকে অদৃশ্য হযো গেল। শহুরে বাবু। মেযেটা শেষ পর্যন্ত তাকে শহুবে বাবু ঠাউবাল নাকি ? নিতান্ত চটে যত দূব সম্ভব দুবে দূরে পা ফেলে হন।হন কবে বাগান পাব হয়ে অশোক মাঠে পড়ল। মাঠে বেড়ানোব আনন্দন্টুকু মাঠে মাবা গেল। অশোক ভাবলে কী কুক্ষণেই মেয়েটাব সঙ্গে দেখা হয়েছিল। সন্ধ্যাব অন্ধকাব একটু অস্বাভাবিক রকম ঘন হয়ে এল। সেদিকে অশোকের নজর পড়ল না। নজৰ পড়লে নদীব চডায় বসে থাকবাব মতো সাহস তার হত না। ঈশান কোণেব জমাট বাঁধা কালো ছায়াটি যে রকম দ্রুতবেগে আকাশের অর্ধেকটা ঢেকে ফেললে তাতে আর অল্পক্ষণের ভেতরেই যে সমস্ত আকাশ ঢেকে ফেলবে সে বিষয়ে সন্দেহ কববার উপায রইল না। হলও তাই । আকাশ যখন প্রায় সবটা ঢাকা পড়েছে তখন অশোক হঠাৎ ব্যাপারটা উপলব্ধি করল। তৎক্ষণাৎ উঠে দাঁড়িয়ে বাড়ির দিকে পা বাড়িয়ে দিল।। যতবার শঙ্কিত দৃষ্টি তুলে আকাশের ভয়ানক কালো, ভয়ানক গভীর মূর্তির দিকে চাইল ততবারই তার গতিবেগ বেড়ে গেল। নেকি তো নেকি, ঝড় শুরু হবার আগে কোনোরকমে বাড়ি পৌছানোর চিন্তা ছাড়া অন্য সব কথা তার মন থেকে বেমালুম লুপ্ত হয়ে গেল। এ সময় এক রকম নিতাকার ব্যাপার হলেও ইতিপূর্বে পূর্ববঙ্গের কালবৈশাখীর যে পরিচয় পেয়েছিল তাতে এই নির্জন মাঠে এই কালবৈশাখীর সঙ্গে মুখোমুখি দাঁড়াবার কল্পনা করেই সে ভয় পেয়ে গেল । জমািট-বাঁধা অন্ধকারকে শিউরে দিয়ে বিদ্যুৎ চমকে উঠল। অশোকের দ্রুত চলা দীেড়নোতে পরিবর্তিত হয়ে গেল। অশোক পুরী গিয়েছিল, দূর থেকে সমুদ্রগর্জন কেমন শোনায় জানত। পিছন থেকে সেই রকম একটা অস্পষ্ট গর্জন কানে আসতেই সে বুঝতে পারল কালবৈশাখী তাড়া করে আসছে এবং তাকে ধরে ফেলতে মাত্র দু-তিন মিনিটের ওয়াস্তা।